আমিরুল হক, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : সারাদেশের মত উত্তরের জেলা নীলফামারীতে মাছ, মাংস, চাল, ডাল, সবজি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা।
আরও পড়ুন : বিকেলে বাজেট পেশ
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টানতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, অনেকের পক্ষে সংসারের খরচ চালানোই এখন কষ্টকর।
তিন সন্তানের জননী ফিরোজা বেগম কাজ করেন উত্তরা ইপিজেডের একটি কারখানায়। স্বামী মোকারম হোসেন ভ্যান চালান। দুজনের আয়েই চলে সংসার।
২০২০ সালে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার পর খরচ বেড়ে যায়। স্বামীর পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়লে ওই বছরই ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন ফিরোজা বেগম।
আরও পড়ুন : শীর্ষ ঋণখেলাপী মাকসুদ গ্রেফতার
স্বামী-স্ত্রীর আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। একটি ব্যাংকে মাসে ১ হাজার টাকা করে সঞ্চয়ও শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু এখন বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। ফলে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এই দম্পতি।
ফিরোজ বেগম বলেন, বাড়তি খরচ ও খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম না কমলে কী করবো, সেই চিন্তায় রাতে দুজন ঘুমাতে পারি না।
আরও পড়ুন : এবার ডলারের দাম কমলো
জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতনে পাই। বাসা ভাড়া চলে যায় ১০ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়। সবমিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায়, মাসের শেষ কয়েকদিন চলাই কষ্টকর হয়ে যায়।
চাকরি করি, তাই গ্রামের সবাই ভাবে, খুব ভালো আছি। কোনো সঞ্চয়ও করতে পারছি না। এমন কি গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য কোন টাকা বা কোন কিছু পাঠাতে পারছি না। কোন রকম দিন পার করছি।
আরও পড়ুন : পদ্মা সেতু অপমানের প্রতিশোধ
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা দাম বেড়েছে সকল প্রকার চালের।
এছাড়া দুদিন আগেও যে মোটা চাল ৪২-৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল সে চাল এখন ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ২৮ চাল এক লাফে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা পাইকারি এবং খুচরা বাাজারে তা ৫৭-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে মিনিকেট চালেরও।
আরও পড়ুন : কে জিতবে তা আমাদের মাথাব্যথা না
অপর দিকে দাম বেড়েছে সবধরনের ভোগ্য পণ্যের। প্যাকেটের গায়ে লেখা কোম্পানির মূল্য তালিকা ছাপিয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে মশার কয়েল, আটা, চিনি, তেল, লবনসহ সকল পণ্যই। বেড়েছে বেকারি বিস্কুট রুটির দাম। কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে মসুর ডাল থেকে শুরু করে সব ধরনের ডালের।
প্যাকেটজাত আটার দামও বেড়েছে কেজিতে ৬-৮ টাকা। দাম বেড়েছে মাছ মাংসেরও। সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ১০০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি এখন সাড়ে ৬’শ টাকা। ৪’শ থেকে সাড়ে চারশ টাকা কেজি দরে দেশী মুরগী বিক্রি হলেও সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে।
আরও পড়ুন : ঈদে মসলার সংকট হবে না
ডিমের দামও বেড়েছে হালিতে ৩-৪ টাকা। পিঁয়াজ-রসুনের বাজারও চড়া। বাজারে দেশী পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর রসুনের দর কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছে।
স্থানীয় ভোক্তাদের অভিযোগ বাজারে মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো চাল, ডাল, তেল, চিনি, কয়েল থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রন করছেন।
সান নিউজ/এইচএন