স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে পত্রিকাটির সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন : নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮
বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে রাজধানীর ডিএমপির রমনা থানায় আইনজীবী আবদুল মালেক মামলাটি দায়ের করেন।
জানা গেছে, রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবু আনছারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী আবদুল মালেক বলেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সাংবাদিক শামসুজ্জামান ও ক্যামেরাম্যানের বিরুদ্ধে একটি এজাহার করেছি।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরিপক্ব
বুধবার (২৯ মার্চ) সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের একজন বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। একই সঙ্গে সংবাদটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে।
সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন।
আরও পড়ুন : দেশের সাফল্য তুলে ধরলেন পররাষ্ট্র সচিব
পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’
এজাহারে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন : এক ঘণ্টা কাজ করলেই বেকার নন
পরবর্তীতে চ্যানেল ৭১ টিভিতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন, কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি, মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ।
প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাতবছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।
আরও পড়ুন : পানির দাম বাড়ানো যাবে না
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি।
শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন : মোটরসাইকেল চলাচলের রিট মুলতবি
প্রসঙ্গত, দৈনিক প্রথম আলো বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি দৈনিক সংবাদপত্র। ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র।
২০০৫ সালে রেমন ম্যাগসেসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ মতিউর রহমান এ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এ পত্রিকাটির প্রকাশক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সান নিউজ/এইচএন