আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নুনুংপ্রু চৌধুরী নামের এক সিনিয়র নার্সের বিরুদ্ধে রোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছে এক ভুক্তভোগী এক নারী।
আরও পড়ুন: এক বিভাগে বৃষ্টির আভাস
ভুক্তভোগী চন্দনা ত্রিপুরা (২৪) গুইমারা উপজেলার ২ নং বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার বাসিন্দা দিনমুজুর ইন্দ্র ত্রিপুরার স্ত্রী।
অভিযোগকারী চন্দনা ত্রিপুরা বলেন, শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালের দিকে তার পেট ব্যথা নিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এ সময় দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স নুনুংপ্রূ চৌধুরী তাকে প্রসব কক্ষে নিয়ে যান।
কোনো গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এবং কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরিক্ষা না করে ঐ নার্স বলেন, রোগীর অবস্থা আশংকাজনক। দ্রুত এমআর করাতে হবে। পেটের মধ্যেই বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে, এমনটা জানিয়েছেন নার্স নুনুংপ্রু।
ভুক্তভোগী ঐ নারীর স্বামী ইন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমার স্ত্রীর পেট ওয়াশ করে দেবেন এই মর্মে দশ হাজার টাকা দাবি করেন নার্স নুনুংপ্রু। এই টাকা দিতে না পারলে কোনো প্রকার সেবা দিবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন
তখন নার্স বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে নিলে পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগতো। এখানে দশ হাজার টাকা দিতে এত কষ্ট কিসের। দিতে না পারলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে স্ত্রীর অবস্থা বেগতিক দেখে সাত হাজার টাকা দিতে রাজি হই, তিনি তাও মানেনি।
এক পর্যায়ে স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে তার কানের দুল ও ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করে এবং মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সাড়ে আট হাজার টাকা নার্সের হাতে তুলে দিই। এ সময় টাকা দেবার কথা যেন আমি কাউকে না জানাই, সে বিষয়ে সর্তক করে দিয়ে নার্স নুনুংপ্রু বলেন, জানালে ভবিষ্যতে তোমার সমস্যা হবে।
পরক্ষণেই তিনি আমাকে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত কিছু ঔষুধ আনতে বলেন। ঔষধগুলো এনে দিতেই নার্স বলেন, এমআর হয়ে গেছে। অথচ আমার যে মৃত বাচ্চা হয়েছে, সেটাও তিনি দেখাননি।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৩২
সরকার প্রসূতি মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনামূল্যে সেবা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। সেই সরকারি হাসপাতালেই প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রসূতির স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, নার্স নুনুংপ্রু কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। হোক সহকর্মী বা কোনো দায়িত্বরত কর্মকতা। কোনো গাইনি ডাক্তারের পরামর্শবিহীন পরীক্ষা-নিরিক্ষা এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়াই সরকারি হাসপাতালে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করে থাকেন প্রতি নিয়ত।
আরও পড়ুন: দাঁড়িয়ে থাকা ৩ বাসে আগুন
তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারলে বিভিন্ন সময়ে বাচ্চা মারা যাওয়া ও মায়ের সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে তাকে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে জরিমানাও দিতে হয়েছে। এছাড়া রোগীদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগও রয়েছে নুনুপ্রু চৌধুরী বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স নুনুংপ্রু চৌধুরী বলেন, আমার গাইনি বিষয়ক স্পেশাল প্রশিক্ষণ রয়েছে। তাই এসব ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হয় না।
টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, আমি কেন দাবি করবো, তারা স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে আমাকে টাকা দিয়েছে। আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি।
আরও পড়ুন: কারামুক্ত হলেন খাদিজা
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একের পর এক অভিযোগ করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও অন্যায়ভাবে আমাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে আরেক প্রসূতির স্বজনের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালে একটা বৈঠক হয়েছে। সে সময় তাকে এমন হীন মানসিকতা পরিহারের জন্য সর্তক করা হয়েছিল। তাতেও যদি ঐ নার্স পুনরায় একই ভুল করে, তাহলে তা মেনে নেয়া যায় না।
আবার একই ভুলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে যথাযত আইনি ব্যবস্থা নিতে বলবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউ এইচ এন এফ পিও) আবুল হাসনাত বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ ও ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স নুনুংপ্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এনজে