বাণিজ্য

ঋণের অপব্যবহার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতা

সান নিউজ ডেস্ক: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে ঋণ জালিয়াতি বন্ধে ও জামানতবিহীন বিশ্বাসের ঋণের অপব্যবহার ঠেকাতে জোরদার করেছে তদারকি ব্যবস্থা। এর অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা দেয়া হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পণ্য আমদানির জন্য কোম্পানিগুলোর সুনামের ভিত্তিতে যেসব ঋণ দেয়া হবে সেসব ঋণের মেয়াদ হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিন এবং শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন। এ সময়ের মধ্যে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সর্বোচ্চ একবার এক মাস ও দুই মাসের জন্য ঋণ নবায়ন করা যাবে। এ জন্য গ্রাহকের গোডাউনে আমদানিকৃত পণ্য আছে কি না, বা মজুদের উদ্দেশ্যে পণ্য রাখা হচ্ছে কি না তার সঠিকতা যাচাই করতে সরেজমিন গোডাইন পরিদর্শন করতে হবে।

সর্বোপরি এসব ঋণ তদারকি করতে প্রতিটি ব্যাংকের গঠন করতে হবে বিশেষ ইউনিট। নীতিমালাটি পরিপালনের জন্য গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, পণ্য আমদানির জন্য গ্রাহকরা ঋণপত্র (এলসি) স্থাপন করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ বা কোম্পানিগুলো নামমাত্র এলসি মার্জিন বা আগাম পরিশোধ করে ঋণপত্র স্থাপন করেন।

যেমন, একজন গ্রাহক বিদেশ থেকে ১০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করবেন। এজন্য গ্রাহক যে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র স্থাপন করবেন ওই ব্যাংককে আগাম এক কোটি টাকা দেয়া হলো। বাকি ৯৯ কোটি টাকা ব্যাংক বিদেশী ক্রেতার ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে পণ্য দেশে আনে। আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিপরীতে ঋণসীমা অনুমোদন করা থাকে।

পণ্য দেশে আসার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গ্রাহকের বিপরীতে অনুমোদিত ঋণের সীমা থেকে পণ্যের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। এসব ঋণকে ব্যাংকভেদে বিভিন্ন নাম দেয়া হয়। সাধারণত, প্রচলিত ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সুনামের বিপরীতে ঋণ বা এলটিআর, এলএটিআর এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো এমটিআর বা এমপিআই নামে অভিহিত হয়। এসব ঋণে তেমন জামানত থাকে না।

সাধারণত গ্রাহক পণ্য বিক্রি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার কথা। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু গ্রাহক গোডাউন থেকে পণ্য খালাস করে বিক্রি করেন ঠিকই, কিন্তু ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেন না। একশ্রেণীর ব্যাংকারের যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক লোকসান দেখিয়ে বা পণ্য অবিক্রীত দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে দীর্ঘায়িত করা হয়।

এক সময়ে এসে ওইসব ঋণকে ব্যাংক ফোর্সড ঋণ বা মেয়াদি ঋণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর একবার মেয়াদি ঋণে রূপান্তর হলে বছরের পর বছর তা ব্যাংকের খাতায় খেলাপি হয়ে যায়। এসব খেলাপি ঋণ নবায়ন করে বারবার নতুন ঋণ নিতে থাকেন একশ্রেণীর অসাধু গ্রাহক। এভাবে ব্যাংকের খাতায় হাজার হাজার কোটি টাকার পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এ মহাজালজালিয়াতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য এই প্রথমবারের মতো এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা দিয়েছে।

তিন পৃষ্ঠার এক নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বাসের ভিত্তিতে যেসব ঋণ দেয়া হয়, সেসব ঋণ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এখন থেকে এসব ঋণ আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন যা ইংরেজিতে পোস্ট ইমপোর্ট ফাইন্যান্সিং সংক্ষেপে যা পিআইএফ নামে অভিহিত হবে। এই পিআইএফের মেয়াদ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিন এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন বা ছয় মাসের বেশি হবে না।

এসব ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। একবার পিআইএফ সৃষ্টি হলে কোনোভাবেই নতুন করে এ ধরনের ঋণ একজন গ্রাহকের নামে সৃষ্টি করা যাবে না। কোনো কারণে এসব ঋণ ফোর্সড ঋণ সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নির্ধারিত ঋণ সীমার মধ্যেই তা সমন্বয় করতে হবে। নতুন করে ঋণসীমা বাড়ানো যাবে না।

এসব ঋণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না হলে সর্বোচ্চ একবার নবায়ন করতে হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ৩০ দিন বা এক মাস এবং শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ দিন বা দুই মাস হবে। আর এ মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধির যথার্থতা যাচাই করতে হবে। সরেজমিন গ্রাহকের গোডাউন পরিদর্শন করতে হবে। অতি মুনাফা লাভের জন্য গোডাউনে পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না তা যাচাই করতে হবে।

নীতিমালায় এসব ঋণ তদারকি করতে প্রতিটি ব্যাংকের পিআইএফ মনিটরিং ইউনিট নামক একটি বিশেষ তদারকি ইউনিট গঠন করতে বলা হয়েছে। অর্থ ঋণ আদালত আইনসহ ব্যাংকিং আইনন-কানুন ও বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক বিধি-বিধান সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং ঋণ আদায়ের কৌশল সম্পর্কে দক্ষ জনবল এ বিশেষ ইউনিটে পদায়ন করতে হবে।

আর এ ইউনিটের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে প্রতিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়িত্ব দিতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর এসব ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। একই সাথে এসব ঋণ তলবি ঋণ বিধায় এ তথ্য খেলাপি ঋণের হিসাবের আওতায় দাখিল করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বায়ার্স ক্রেডিট, স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাংক এলসিসহ অনেক কিছুই এক্ষেত্রে এড়িয়ে গেলেও এই প্রথমবারের মতো যে নীতিমালাটি দেয়া হয়েছে তা যথাযথ কার্যকর হলে ব্যাংকিং খাতে জালজালিয়াতি অনেকাংশে কমে যাবে।

তবে, এ নীতিমালা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে এর সুফল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোরভাবে মনিটরিং করলেই কেবল এর সুফল মিলবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কানকাটা কাদিরা খুন, প্রবাসীসহ গ্রেপ্তার ৩

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আব্দুল কাদের জিলানী ওরফে কানকাটা কাদিরা (৩৫)কে পিটিয়ে ও ক...

হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রাবেয়া বেগম (৪৮) নামে...

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ ৩ জন দোষী সাব্যস্ত

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সত্যতা ম...

লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবি: ২৬ বাংলাদেশির দলে চারজনের মৃত্যু

লিবিয়ার উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে অন্তত চা...

বিচারকের ছেলে হত্যার প্রতিবাদে ইবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহমানের বাসায় প্রবেশ করে তার...

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে দেশজুড়ে মিষ্টি বিতরণ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ...

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করেছে এ রায় ব...

এই রায়ে জুলাই শহীদেরা ন্যায়বিচার পেয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ...

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা