আন্তর্জাতিক

নতুন প্রজাতির ‘ড্রাগন ম্যান’ সন্ধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বদলে গেল মানব ইতিহাস। সম্প্রতি চীনের গবেষকরা উত্তর-পূর্ব চীন থেকে পাওয়া গেছে একটি খুলি। দেখতে সম্পূর্ণ নতুন এক মানব সদৃশ প্রজাতির খুলি। বিজ্ঞানীদের এই দলটি দাবি করছেন, মানব বিবর্তন প্রক্রিয়ায় নিয়েন্ডারথাল এবং হোমো ইরেকটাসের মতো এই প্রজাতির মানব আমাদের ‘সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়’।

এই মানব প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে ড্রাগন ম্যান। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নমুনাটি এমন এক মানব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে যা অন্তত এক লাখ ৪৬ হাজার বছর আগে পূর্ব এশিয়ায় বসবাস করতো।

উত্তর-পূর্ব চীনের হারবিন শহরে ১৯৩৩ সালে এই খুলি পাওয়া গেলেও খুব সম্প্রতি এটি বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মাথার এই খুলির একটি বিশ্লেষণ সম্প্রতি ‘দ্য ইনোভেশন’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, নতুন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে হোমো স্যাপিয়েন্সের কোথা থেকে ও কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল সে সম্পর্ক বিদ্যমান ধারণা বদলে দিতে পারে।

মানব বিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাজ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন বিজ্ঞানী ও গবেষক লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রফেসর ক্রিস স্ট্রিঙ্গার এই গবেষণা দলের একজন সদস্য ছিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে মানব বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হতে পারে। তাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই প্রজাতির মানব নিয়েন্ডারথালের চেয়েও হোমো স্যাপিয়েন্সের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ।

গবেষকরা বলছেন, এই নতুন প্রজাতির মানব হচ্ছে হোমো লোঙ্গি। এই লোঙ্গি শব্দটি এসেছে চীনা শব্দ ‘লং’ থেকে যার অর্থ ড্রাগন। চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এবং শিজিয়াঝুয়াঙ প্রদেশে হেবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিজুন নি বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে ‘বহু আগে হারিয়ে যাওয়া এক বংশধরকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।’

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এটা যে এতো ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। এই খুলির সবকিছু দেখা যাচ্ছে। এটা সত্যিই দারুণ এক আবিষ্কার!’

আমাদেরসহ অন্যান্য মানব প্রজাতির মাথার খুলির সঙ্গে তুলনা করলে এই খুলিটি আকারে বেশ বড়। তবে মস্তিষ্কের আকার প্রায় একই ধরনের। বলা হচ্ছে, এই খুলিটি প্রাপ্তবয়স্ক এক পুরুষের। খুলি দেখে বোঝা যায় ড্রাগন ম্যানের চোখের কোটর বিশাল ও চতুর্ভুজ আকৃতির, ভ্রুর খাঁজ বিশাল আকারের, প্রশস্ত মুখ এবং বড় আকারের দাঁত।

হেবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কিয়াং জি বলেন, এখনও পর্যন্ত মানুষের মাথার খুলির যতো জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্পূর্ণ। এছাড়া অন্যান্য সব মানব প্রজাতির চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, ড্রাগন ম্যান ছিল খুব শক্ত সামর্থ্য মানুষ এবং কর্কশ। তবে তারা কিভাবে ও কেমন করে বসবাস করতো সে বিষয়ে খুব কমই জানা গেছে। কারণ এই খুলিটি যে এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে এটিকে সরিয়ে ফেলা হয়।

এর অর্থ এই খুলি যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক দিক সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। যেমন- সেখানে পাথরের তৈরি কী ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করা হতো এবং ওই এলাকায় সাংস্কৃতিক আরও কী ধরনের উপাদান ছিল সেসব বিষয় অজ্ঞাত রয়ে গেছে।

নতুন প্রজাতির মানবের এই খুলিটি পাওয়া যায় ১৯৩৩ সালে। হারবিনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সঙ্গুয়া নদীর ওপর একটি সেতু তৈরির সময় একজন নির্মাণ শ্রমিক এর সন্ধান পান। যে সময় এই খুলিটি পাওয়া যায় সে সময়ে এই শহরটি ছিল জাপানের অধীনে।

চীনা শ্রমিকটি মনে করেছিলেন, এই খুলির সাংস্কৃতিক মূল্য অনেক এবং একারণে তিনি এটিকে লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান যাতে খুলিটি জাপানিদের হাতে চলে না যায়। নিজের বাড়ির কূপের একেবারে তলায় তিনি খুলিটি লুকিয়ে রাখেন। সেখানে এটি ছিল প্রায় ৮০ বছর। লোকটি মারা যাওয়ার আগে তার পরিবারের সদস্যদের এই খুলির কথা বলে যান এবং পরে তাদের মাধ্যমেই এটি বিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছায়।

এর আগেও চীনে প্রাচীন কালের আরও কিছু মানব দেহাবশেষের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ড্রাগন ম্যান এরকমই সবশেষ আবিষ্কার। আগে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সেগুলোকে আলাদা করে শ্রেণীভুক্ত করা কঠিন ছিল। সেগুলো মূলত দালি, জিন্নিওশান, হুয়ালংডং এবং তিব্বতীয় অঞ্চলের। এসব দেহাবশেষ হোমো স্যাপিয়েন্স, নিয়েন্ডারথালস কিংবা ডেনিসোভান্স অথবা একেবারেই ভিন্ন কোনো প্রজাতির মানবের কি না সে বিষয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে।

রাশিয়ার ডেনিসোভা গুহায় ৩০/৫০ হাজার বছর পুরনো একটি আঙ্গুল পাওয়া গিয়েছিল। সেই আঙ্গুলের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ডেনিসোভান্স প্রজাতি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্তা মিরাজন লাহর বিশ্বাস করেন, এই ড্রাগন ম্যানই আসলে ডেনিসোভান।

তিনি বলেন, ‘অতীতের সবচেয়ে রহস্যময় জনগোষ্ঠী এই ডেনিসোভান্স। তিব্বতীয় মালভূমিতে যে চোয়ালের হাড় পাওয়া গেছে তার ডিএনএ থেকে মনে হয় সেটিও ছিল একজন ডেনিসোভানের। আর এখন চোয়ালের হাড় যেহেতু তিব্বতের এবং ড্রাগন ম্যানকে একই রকমের বলে মনে হচ্ছে- আমরা হয়তো এই প্রথমবারের মতো ডেনিসোভানের মুখ পেয়ে গেলাম।’

সম্প্রতি ইসরায়েলেও নিয়েন্ডারথালের সম্ভাব্য পূর্বসূরির কিছু দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। ওই জীবাশ্মটি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলছেন, লেভান্ত অঞ্চলের প্রথম মানবগোষ্ঠী থেকে এই ড্রাগন ম্যানের আবির্ভাব ঘটতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, প্রধানম...

আবেদনময়ী লুকে নুসরাত

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চলচ্চিত্র চিত্রনায়িকা নুসরাত...

খাগড়াছড়িতে শাশুড়ি হত্যায় জামাতা আটক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়িতে জুয়া খেলতে...

৬ তারিখে বাজেট প্রস্তাবন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন, ৬...

গণতন্ত্র শেখ হাসিনার হাতেই সুরক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকামী মান...

আজ গ্যাস বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায় 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনে প্রয়ো...

ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত

জেলা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক খাদে পড়ে ২...

মদিনায় বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবে পবিত...

ঐশ্বরিয়ার লুক নিয়ে নেট পাড়ায় ঝড়

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৭তম আসরে লাল গালিচার অতি...

হরিয়ানায় চলন্ত বাসে আগুন, নিহত ৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের হরিয়ানা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা