নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে স্লোগান ও মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো শহর। নগরীর অলিগলিতে নেমেছে গণমানুষের ঢল।
আরও পড়ুন: রংপুর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
বুধবার (২ আগস্ট) মধ্য রাত থেকেই রংপুরে গণমানুষের ঢল থেকে ভেসে আসে ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’ স্লোগান। এ দিন মহাসমাবেশ বিকেলে হলেও সকাল থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হতে শুরু করেছে রংপুর জিলা স্কুলের আশপাশ।
সকাল ৮ টা থেকে সভাস্থল ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতা-কর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করেছেন। রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলা থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আগমনে নগর জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেছেন ১১৪০১৮ হাজি
আয়োজকদের দাবি, দুপুর ১২ টার আগেই জনসভাস্থলসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুলের দিকে আসছেন নেতা-কর্মীরা। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে বিভিন্ন স্লোগানে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন তারা।
আরও পড়ুন: এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা বিকেলে
এ দিন লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা আসছেন দলে দলে। বাস, ট্রেন, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি করে আসছেন তারা। হেঁটেও আসছেন অনেকে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পুরো রংপুর মহানগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি।
এছাড়া নগরীর ২১ টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: তারেক-জোবায়দার রায় আজ
সেই সাথে ১০০০-এরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুটগুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে শাপলা চত্বর এলাকা পর্যন্ত রংপুর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে কোনো ভারি যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নির্ধারিত ২১ টি পয়েন্টে যানবাহন রেখে বিভিন্ন নেতার পক্ষ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা অভিমুখে রওনা দেন।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪২
একই ভাবে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুরুষ ও নারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
সমাবেশ উপলক্ষে নগরীর বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। জনসভা শুরুর আগে অনেকেই সুরভি উদ্যান, চিড়িয়াখানা, চিকলি ওয়াটার পার্ক, সিটি চিকলি বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় সময় কাটাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ছাড়া স্কুলে নয়
এছাড়া নগরীর নয়নাভিরাম সড়কগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনদের ঘুরতে ও ছবি তুলতে দেখা যায়।
জনসভাকে ঘিরে নগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বেঁচা-কেনা বেড়েছে।
মহাসমাবেশ উপলক্ষে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছাড়াও জিলা স্কুলের মাঠে নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগের ৩ শতাধিকের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিতে উদগ্রীব
জনসভায় আসা মানুষের জন্য আড়াই লাখ পানির বোতলের ব্যবস্থা করেছে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। তার আগমনকে ঘিরে উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপ-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। এখন খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত রংপুর নগরী। পুরো বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় সমাবেশ করতে প্রস্তুত জামাত!
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা রয়েছে। এছাড়া উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন।
তিনি আরও বলেন, জনসভাস্থলসহ পুরো শহর এবং সার্কিট হাউজ পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে এনেছি। সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ১০০০-এরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। ডিজিটালি মনিটরিং করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মাঠের ভেতরে এবং বাইরে রয়েছে। সেই সাথে আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবকরাও আছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষমতায় আসার নীলনকশা করছে বিএনপি
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরসূচি অনুযায়ী, দুপুর ২ টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউজের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
এরপর সোয়া ২ টার দিকে সার্কিট হাউজে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল ৩ টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশস্থলে পৌঁছাবেন তিনি। সেখানে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন সরকারপ্রধান।
আরও পড়ুন: আ’লীগ বুঝতে পারেনি, বিজয় আমাদের
এ দিন রংপুরের ২৭ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫ টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন তিনি।
মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বিকেলে একই পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন। সে সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে ২ টি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর আবার রংপুরে আসছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মেঘনায় সিরামিক ভর্তি লাইটার ডুবি
এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপরই রংপুর বিভাগ, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
প্রতিশ্রুতির আলোকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সান নিউজ/এনজে
