প্রবাস

বসনিয়ার জঙ্গলে মৃত্যুর মুখে বহু বাংলাদেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাপমাত্রা হিমাঙ্কর নিচে। তুষারে ঢেকে গেছে বসনিয়ার সীমান্ত এলাকা। ঠাণ্ডা হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। বিপজ্জনক আবহওয়ায় বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ভেলিকা ক্লাদুসার একটি জঙ্গলে কয়েক মাস ধরে অবরুদ্ধ হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশী। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ মধ্যেপ্রাচ্য থেকে আসা কয়েক দেশের নাগরিক রয়েছেন। উন্নত জীবনের খোঁজে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের স্বপ্ন বুনছিলেন তারা। কিন্তু এখন তাদের এক বেলা খাবারই জোটছে না। অনেকটা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে পড়ে গেছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।

গত কয়েক দিন আগে বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের অস্থায়ী লিপা আশ্রয়শিবির আগুনে পুড়ে যাওয়ায় প্রবল তুষারপাতে খোলা আকাশের নিচেই কাটছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে আবহাওয়ার চরম অবনতিতে মৃত্যুর মুখে তারা। যাদের লক্ষ্য ছিল ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করা।

সঙ্গে থাকা কম্বল এবং ব্যাগের মধ্যে ঢুকেই তীব্র শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এক হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী। বিভিন্ন জায়গা থেকে যেই সামন্য খাবারটুকু সহায়তা হিসেবে আসছে তা খেয়েই কোনো রকম বেঁচে আছেন তারা।

বসনিয়া সরকারও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। এখানে প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে। তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত কমছে। শীত নিবারণের জন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই। এক টুইটবার্তায় এমনটাই বলছিলেন বসনিয়ার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান পিটার ভন দুর অরায়ের্ট। তিনি আরও যোগ করেন, জীবনযুদ্ধে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বাঁচাতে সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি।

পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর প্রত্যাশায় হাজারো অভিবাসীর পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বসনিয়া। বেশির ভাগ বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিম ক্রাজিনা অঞ্চলে আটকে আছেন। কারণ জাতিগতভাবে বিভক্ত জাতিটির অন্যান্য অঞ্চল অভিবাসীদের দায়িত্ব নিতে চাইছে না।

ঠাণ্ডায় অভিবাসীদের মানবেতর অবস্থা হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বসনিয়াকে সতর্ক করেছে আগেই। রাজনীতিবিদদের একটি ঐকমত্যে আসারও আহ্বান জানানো হয়। তবে তারা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি এখনো।

জীবন ‘পশুর’ মতো : শনিবার বসনিয়ার আন্তর্জাতিক রেডক্রসের একটি দল বিপর্যস্ত অভিবাসীদের পানি এবং কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। খাবার বিতরণে সহযোগিতা করে সেখানে থাকা দায়িত্বরত পুলিশ।

এক পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশী কাছিম বলেন, ‘আমারা এখানে পশুর মতো জীবনযাপন করছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটা পশু আমাদের থেকে ভালোভাবে বেঁচে থাকে। আমারা যদিও এখন সাহায্য না পাই এখানে মৃত্যু অবধারিত। দয়া করে আমাদের বাঁচান।’

আরেকজন জানান, ‘তিন দিন ধরে আমাদের কম্বল নেই, ঘুমানোর জায়গা নেই। সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়শিবিরের ভেতরে তুষার পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই মারা যাব।’

তাদের পুনর্বাসনের জন্য বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায়ার বিহাক শহরের মধ্যাঞ্চলের এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল, তবে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে অন্তত দেড় হাজার বাংলাদেশি ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বলকানের চার দেশে পৌঁছান। এদের মধ্যে অন্তত এক হাজার ৩০০ বাংলাদেশি গেছেন বসনিয়ায়। আর ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী বসনিয়ার জঙ্গলসহ আশপাশে অভিবাসীদের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে, তাদের বড় অংশই বাংলাদেশের নাগরিক।

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া গত কয়েক বছর ধরে বিপজ্জনক হয়ে উঠায় এখন স্থলপথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। দালাদের খপ্পরে পড়ে অনেকে সীমান্ত হয়ে ইউরোপ ঢোকার চেষ্টা চালান। এর মধ্যে বসনিয়া হয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রবেশের অন্যতম একটি পথ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সরকার সীমান্তজুড়ে কঠোর নজরদারির আওতায় আনায় ইউরোপে প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের নির্মম নির্যাতনের মুখে পড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে হাতিয়াতে উঠান বৈঠক

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষ...

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ইসলাম...

বাগেরহাটের কলার বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার দাম ভালো পাওয়ায়...

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের ঘটনা

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যার ঘটনা এমন মন্তব্য কর...

একীভূত হচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি

সম্প্রতি গুঞ্জন উঠে দেশের তরুণদের নিয়ে গঠিত দল দুইটি একীভূত হওয়ার বিষয়ে। তবে...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

আপিলেও জয়ী সেই আরিফ, এখন পৌর মেয়রের শপথের অপেক্ষায় 

কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মো. আরিফুর রহ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা