শিল্প ও সাহিত্য

দৈনিক ছোলতান ও সূর্যসেনের আটক কাহিনী

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, চট্টগ্রামের সন্তান মাস্টারদা সূর্যসেনকে ধরার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে তৎকালিন বৃটিশ সরকার। আর সে সংবাদটি ১৯৩০ সালের ৩০ মে প্রকাশ করেছিল ‘দৈনিক ছোলতান’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকা।

এরপর অবশ্য ধরা পড়েছিলেন সূর্যসেন। তাকে ধরিয়ে দেয়ার পেছনে ব্রিটিশদের হয়ে কাজ করেন নেত্র সেন নামের একজন। তার দেয়া তথ্যেই মূলত বৃটিশরা সূর্যদাকে আটক করে।

নেত্র সেনও এর উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছিলেন। রাতের খাবারের সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক কর্মী দায়ের কোপে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন তার। যাওয়ার আগে তিনি বলে যান মাস্টারদার সঙ্গে বেঈমানির এটাই উপযুক্ত শাস্তি।

ব্রিটিশদের পুরস্কারের লোভে ধরিয়ে দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের মত একজন মানুষকে। স্বামীর এমন অপরাধে সবকিছুর সাক্ষী হয়েও কিছুটা প্রায়শ্চিত্য করতেই নাকি স্বামীর হত্যাকারীর নাম কাউকে বলেননি তিনি। ব্রিটিশ পুলিশ শত চেষ্টা করেও নেত্র সেনের স্ত্রীর মুখ থেকে হত্যাকারীর নামটি বের করতে পারেনি।

দুই আনা দামের ৮ পৃষ্ঠার দৈনিকটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির দুর্লভ একটি কপি রয়েছে চট্টগ্রামের জলছাপ বইয়ের লেখক, তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা তারেক জুয়েলের সংগ্রহশালায়।

দৈনিক ছোলতান-এর ওই সংখ্যার চতুর্থ কলামের শুরুতে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুন্ঠন সংক্রান্ত খবরটি ছাপা হয়। সংবাদটির মূল শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম হাঙ্গামার তদন্ত’; উপশিরোনাম করা হয়, ‘পলাতকের সন্ধানে পুরস্কার/সরকারের বিফল চেষ্টা’সংবাদে উল্লেখ করা হয়, “চট্টগ্রাম, ২৭ শে মে। এখানে অস্ত্রশস্ত্র লুট করার ব্যাপারে যাহারা নেতৃত্ব করিয়া ছিলেন, এখনও তাহাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই। নিম্ন লিখিত ২০ জন পলাতককে ধরাইয়া দেওয়ার জন্য জেলা মাজিস্ট্রেট পুরস্কার ঘোষণা করিয়াছেন, সূর্য্য সেন, অনন্ত সিং, নির্মল সেন, গনেশ ঘোষ, অম্বিকা চক্রবর্ত্তী, লোকনাথ বউল প্রত্যেককে ধরাইয়া দিলে ৫ হাজার টাকা হিসেবে পুরস্কার।

জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, হরিপদ মহাজন, বীরেন্দ্র দে- প্রত্যেকের জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার; তারকেশ্বর দস্তিদার, ভবতোষ চ্যাটার্জি, সরোজ গুহ, সুধাংশু, রামকৃৃষ্ণ বিশ্বাস, তেমেন্দ্র দস্তিদার, কৃৃষ্ণ চৌধুরী, ক্ষীরোদ ব্যানার্জি, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, নীরেন্দ্র দত্ত- আড়াই শত টাকা হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হইবে। পূর্ব্ব তালিকায় কতকগুলি ভুল ছিল। তাহা সংশোধন করিয়া বর্তমান তালিকা প্রস্তুত করা হইয়াছে। উক্ত পলাতক ব্যক্তি দিগকে আশ্রয় বা খাদ্য প্রদান করিতে নিষেধ করিয়া ম্যাজিস্ট্রেট এক আদেশ দিয়াছেন। এখনও রাত্রে সাজোয়া গাড়ী রাস্তা পাহারা দিতেছে। সহরের অবস্থা এক রূপ শান্ত আছে। কার্ফু অর্ডার এখনও বলবৎ আছে।”

চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে অগ্রনায়ক ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন। চট্টগ্রামেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন মুক্তিকামী মানুষদের নিয়ে একটি দল। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা যোগ দেন সশস্ত্র বিদ্রোহে। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট করা হয়। এরপরই মাস্টারদাকে ধরতে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ব্রিটিশরা। দুই বছর পর ১৯৩২ সালের জুলাইয়ে পুরস্কারের অর্থমূল্য দ্বিগুণ করে দশ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়।

১৯৩০ সালের ২৪ জুলাই সরকার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শুরু করে। পরবর্তীতে মাস্টারদা পটিয়ার কাছে গৈরালা গ্রামে আত্মগোপন করেন। কিন্তু সূর্যসেনের লুকিয়ে থাকার তথ্য স্থানীয় বাসিন্দা নেত্র সেন পুলিশকে জানিয়ে দেয়। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গোর্খা সৈন্যরা স্থানটি ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন ধরা পড়েন।
১৯৩৩ সালে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্য সেনের ফাঁসির রায় হয়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি। ফাঁসির পর লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজারে তুলে নিয়ে বুকে লোহা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।

দৈনিক ছোলতান-এর ১৯৩০ সালের ৩০ মে সংখ্যাটি সংরক্ষিত আছে চট্টগ্রামের সন্তান তারেক জুয়েলের কাছে।
তিনি বলেন , আমার একজন মামা শ্বশুরের কাছ থেকে দৈনিক ছোলতান এর দুর্লভ এই সংখ্যাটি সংগ্রহ করেছি। বেশ পুরোনো, দুর্লভ যে কোনো কিছু আমি প্রতিনিয়ত সংগ্রহের চেষ্টা করি, এটা আমার নেশা, মনের খোরাক। সুত্র:একুশে পত্রিকা।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্রাজিল দলে ফিরছেন নেইমার, বাদ ভিনিসিয়ুস

আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। বাছাইপর্বে বাকি আছে মাত্র দ...

ডাকসু নির্বাচনে মব সৃষ্টি করে ছাত্রদলকে বাধা দেয়া হয়েছে: রিজভী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনয়ন...

রূপলাল-প্রদীপকে মারধরে জড়িত অনেকে চিহ্নিত, গ্রেপ্তার নেই

রংপুরের তারাগঞ্জে দুই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও...

বলিভিয়ার মানুষ  দীর্ঘ দুই দশকের বামপন্থী শাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে

দুই দশক ধরে লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া শাসন করছে বামপন্থী মুভমেন্ট অব সোশ্যাল...

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সহায়তা করবে বলে জা...

সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব শিগগিরই দেশের সব জেলায় নতুন জেলা...

বিএফআইইউ প্রধানের বিরুদ্ধে আজই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ...

ইতিহাস গড়লেন মোহামেদ সালাহ

লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতানোর পর মিশরীয় এই ফরোয়ার্ড তৃতীয়বারের মতো...

আরিয়ানই আমার ভবিষ্যতের আস্থা : শাহরুখ খান

বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ নতুন কিছু...

ডাকসুতে কাদের-বাকেরের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে প্যানেল ঘো...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা