ক্রীড়া প্রতিবেদক : নিষেধাজ্ঞার মেয়া শেষ হয়েছে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ রাতে। ২৯ তারিখ থেকে তিনি মুক্ত-বিহঙ্গ। কিন্তু সেই বিহঙ্গের ডানা মেলে আকাশে ওড়ার যে সুযোগই তৈরি হচ্ছিল না! অবশেষে সেই সুযোগ এসে গেছে।
অগণিত ভক্ত-সমর্থকের অপেক্ষার প্রহর কেটে যাচ্ছে আজ সন্ধ্যায়। বঙ্গবন্ধু কাপ টি-টোয়েন্টি আজ সন্ধ্যায় মাঠে নামছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিষেধাজ্ঞা কাটানোর প্রায় একমাস পর, আর সাড়ে ১৩ মাস পর মাঠে নামছেন সাকিব।
সর্বশেষ তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি। এরপর তিনি সর্বশেষ ১২ অক্টোবর খেলেছেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে।
সিপিএলের ফাইনাল খেলে দেশে ফেরার পরই জাতীয় পর্যায়ের সব ক্রিকেটারকে নিয়ে বিসিবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন সাকিব। তার নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা চলে যায় ধর্মঘটে। নানা আলোচনার পর অবশেষে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় সাকিবরা।
এরপরই বাজ পড়ার মত খবর, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। কেন? জানা গেছে গুরুতর অপরাধের তথ্য। জুয়াড়িরা বেশ কয়েকবার সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। সাকিব সে সব প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
আবার জুয়াড়িদের ফিরিয়েও দেননি। আলোচনা চালিয়ে গেছেন। এসব তথ্য তিনি আবার গোপন করেছেন কিংবা আইসিসি বা বিসিবিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।
কিন্তু জালের মত বিস্তৃত আইসিসির রাডারে ঠিকই ধরা পড়ে যান সাকিব। যদিও ধরা খাওয়ার পর তিনি পুরোপুরি ‘সুবোধ’ বালকে পরিণত হন। আইসিসিকে পূর্ণ সহযোগিতা করেন। কিছুদিন আগে জানা গেছে, আইসিসির তদন্ত মাথায় নিয়েই নাকি সাকিব পুরো ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ মাতিয়ে এসেছিলেন।
সে যাই হোক, আইসিসির তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে অপরাধ খুব বড় না হওয়ায় শাস্তি দেয়া হয় ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা। তদন্ত কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবে শুরুতেই এক বছর কমিয়ে শাস্তি দেয়া হয় বাকি এক বছরের। সাকিবও শেষ পর্যন্ত মাথা পেতে নেন সেই শাস্তি। যেটা শেষ হয়েছে গত ২৯ অক্টোবর।
সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর অবশেষে আজ মাঠে ফিরছেন সাকিব। তবে যতটা গৌরব আর জৌলুস নিয়ে মাঠে নামার কথা ছিল সাকিবের, ততটা হচ্ছে না। কারণ, বিতর্ক। সাকিব নিজেই নিজের চারপাশে এত বিতর্কের জাল পেতে রেখেছেন যে, ভক্তরা পর্যন্ত তার সমালোচনায় মুখর।
মাসের শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই তিনি গুলশানে জনসমাগমে গিয়ে সুপারশপ উদ্বোধন করলেন। যেখানে তার বেশ কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা, সেখানে সাকিব আসার পরদিনই চলে গেলেন সুপারশপ উদ্বোধনে। সবার কাছেই দৃষ্টিকটু লেগেছে ব্যাপারটা।
সেটাও খুব একটা আলোচনার জন্ম দেয়নি। কিন্তু এর কয়েকদিন পর হঠাৎ সড়কপথে বেনাপোল হয়ে সাকিব চলে গেলেন কলকাতায়। বেনাপোলে এক সমর্থক সেলফি তুলতে চাওয়ায় সাকিব তার মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর সাকিব কলকাতায় গিয়ে উদ্বোধন করলেন কালিপুজার। যদিও তিনি পরে ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি শুধু অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধন করেননি।
সে যাই হোক, পুজা মন্ডপে সাকিবের উপস্থিতি, ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে তুমুল সমালোচনা তৈরি হয় সারা দেশে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ বিষয়টা মেনেই নিতে পারেননি। সমালোচনার মুখে সাকিব এসে ক্ষমা চেয়ে ভিডিও পোস্ট করেন। এরই মধ্যে আরেক উগ্রবাদী সাকিবকে ‘হত্যার’ হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
এতসব ঘটনা আর বিতর্কের আড়ালে সাকিব প্রস্তুতি নিয়েছেন মাঠে ফেরার। সাকিব অবশ্য এমন একজন মানুষ, যিনি মাঠের বাইরের বিতর্ক গায়ে মাখেন না। মাঠে ঠিকই পারফর্ম করেন।
জেমকন খুলনার হয়ে মাঠে নামার পর কি তারই প্রতিফলন ঘটবে? ভক্ত-সমর্থকরা তারই অপেক্ষায়। যদিও কাগজে-কলমে সাকিবের জেমকন খুলনা বেশ শক্তিশালী। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন এই দলে। যার কাঁধে আবার নেতৃত্বের ভার। ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, আরিফুল হক, জহিরুল ইসলাম অমি, লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনরা রয়েছেন সাকিবের দলে।
সুতরাং, দলগতভাবেও বেশ শক্তিশালী খুলনার এই ফ্রাঞ্চাইজি। সুতরাং, দেখার বিষয়, ফেরার দিনে আসলে কি করেন সাকিব।
সান নিউজ/এম