সান নিউজ ডেস্ক : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে।
আরও পড়ুন : ড. কুদরাত-এ-খুদা’র জন্ম
সোমবার (৮ মে) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা। এছাড়া চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও তার বিশ্বখ্যাতি রয়েছে।
আরও পড়ুন : পেরুতে স্বর্ণখনিতে আগুন, নিহত ২৭
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গান প্রেরণার বিশেষ উৎস হয়ে উঠেছিল। বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা অর্থাৎ সব অনুভব বিশ্বস্ততার সাথে উঠে এসেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত হয়। বঙ্গবন্ধু সংকট উত্তরণে প্রেরণা নিতেন রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে।
আরও পড়ুন : টেক্সাসে গাড়িচাপায় নিহত ৭
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯১৩ সালে 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস মতাদর্শ, ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন।
অহেতুক যুদ্ধ-সংঘাত, মৌলবাদের উত্থান, জাতীয়তা বোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য ও হানাহানির কারণে বর্তমান বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর = আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রবীন্দ্রসাহিত্য আমাদের পাঠ করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনবোধের আলোকে। তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা না ফিরলে গণতন্ত্র ফিরতো না
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জমিদারির দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু করে তাদের ভেতর প্রণোদনা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। তার প্রবর্তিত সমবায় ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন পরবর্তীকালে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের একান্ত আপনজন। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে অবস্থানকালে এসব অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। শিলাইদহ ও পতিসর অঞ্চলেই তিনি রচনা করেছিলেন 'ছিন্নপত্র'র সিংহভাগ এবং অসামান্য কিছু গান।
আরও পড়ুন : বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বকবির স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শিল্পীসত্তার সাথে একাত্ম হয়েছে মানবিক সত্তাও।
ফলে সাধারণ বাঙালির দুঃখ-বেদনার কথক রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন।
আরও পড়ুন : ডেন্টালে ভর্তি শুরু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তি নিকেতন। সেই সাথে তিনি পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।
মানবতাবাদী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।
আরও পড়ুন : নাইজারে বিস্ফোরণে ৭ সেনা নিহত
এ বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
সান নিউজ/এনজে