নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : সোনারগাঁয়ে সরকারদলীয় নেতাদের হত্যার পরিকল্পনায় মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলামের একটি গ্রুপ। একই পরিকল্পনার প্রাথমিক অংশ হিসেবে হেফাজতের হামলার শিকার হয়েছিলেন সোনারগাঁয়ের সাংবাদিক হাবিবুর রহমান। ইতোমধ্যেই হেফাজতের কয়েকজন ফেসবুকের মাধ্যমে নিজেদের গ্রুপ পোস্টে হত্যায় উস্কানি দিতে বার্তাও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এসব সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে এই পরিকল্পনার মূলহোতা হেফাজতে ইসলামের নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সাইফ, হেফাজতে ইসলামের কর্মী কাজি সমির ও তাবলীগ জামাতের সদস্য আব্দুল অহিদকে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক দল অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে তার কথিত স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ করার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করেছিলেন যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু, সোহাগ রনিসহ সেখানে উপস্থিত অনেকেই। ওই ঘটনার মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্টটিতে তাণ্ডব চালিয়ে পুলিশের জিম্মায় থাকা মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাপক ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়নি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, যুবলীগ নেতা নান্নু ও ছাত্রলীগ নেতা রনির বাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। এসব ঘটনায় দায়ের করা পৃথক ৪টি মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর হেফাজতের মূল টার্গেটে পরিণত হন সোনারগাঁয়ের ছাত্রনেতা সোহাগ রনি। মামুনুল হকের কথিক স্ত্রী ঝরনার ছবির সঙ্গে রনির ছবি জুড়ে দিয়ে তাকে ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রী বানিয়ে গুজবও ছড়ানো হয়। এই অপকর্ম থেকে রক্ষা পাননি যুবলীগ নেতা নান্নুও।
সূত্র আরও জানায়, হেফাজতের এই সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিশাল সাইবার সেলের সদস্যরা। এসব কাণ্ড ঘটিয়ে তারা রনি ও নান্নুর বিরুদ্ধ জনরোষ সৃষ্টি ও হেফাজতের কর্মীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে চেয়েছিল, যা হত্যা পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হচ্ছে।
পুলিশের ওই সূত্র এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে স্থানীয় জাতীয় পার্টির কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলেও আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছি। তাছাড়া জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতার ফেসবুক আইডিতেও ওই ঘটনায় সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে ও হেফাজতের পক্ষে প্রচারণা চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ইস্যুতে সোনারগাঁয়ের কয়েকজন সরকারদলীয় নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হেফাজতের একটি গ্রুপ। সেই পরিকল্পনায় সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনি, সোনারগাঁ ছাত্রলীগের সদস্য ও জার্নালিস্ট ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল হাসানকে টার্গেট করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ রনিকে হত্যা করতে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনার কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও হাতে এসেছে তাদের।
এদিকে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন তাবলীগ জামাতের সদস্যও আছেন, যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, হেফাজতের নীতিগত আদর্শের সঙ্গে তাবলীগ জামাতের আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, আমরা প্রতিটি ঘটনা অত্যন্ত সুচারুভাবে তদন্ত করছি। গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছি। এসব ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
সান নিউজ/এসএম