সান নিউজ ডেস্ক : দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা মাসে সাড়ে ২১ টাকা সহযোগিতা করলে বছরে ৬০ হাজার ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিতে পারবে। ক্যান্সার এক সময় ধনীদের রোগ বলা হলেও ক্যান্সার এখন সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
এমনও অনেক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী দেখা যাচ্ছে যাদের ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় দুঃসহ কষ্ট নিয়ে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ নয়, কেবল মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা মাসে মাত্র ২১.৫০ টাকা ( বছরে ২৫৮ টাকা) জমা করলেই ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার বিশাল সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ও মহাখালীর ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও গবেষণা হাসপাতালের (ক্যান্সার হাসপাতাল নামে বহুল পরিচিত) এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন এবং আরও দুজনের সমন্বয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সোস্যাল এন্ড এডমিনিস্ট্রেটিভ সায়েন্সেস নামক জার্নালে গত ১২ জানুয়ারি।
এই গবেষণাটি http://www.aessweb.com/pdf-files/IJSAS20216(1)1-7.pdf এই লিঙ্কে দেখা যাবে পিডিএফ ফরম্যাটে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বাংলাদশের প্রতিটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী মাসে সাড়ে ২১ টাকা জমা দিলে ক্যান্সার রোগীদের স্ক্রিনিং, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং অস্ত্রোপচারের মতো ব্যয়বহুল খরচ জোগানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে গবেষণার প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প উৎস হতে অর্থায়ন করা সংক্রান্ত এ ধরনের প্রথম গবেষণা এটি। ‘কিভাবে খুব সামান্য অর্থনৈতিক অবদান রাখলে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যায় আমাদের এই ধারণা প্রয়োগ করে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগও চিকিৎসা করা যাবে বিনামূল্যে অথবা কম মূল্যে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
মোবাইল ব্যবহারকারীর সাড়ে ২১ টাকা দানে ক্যান্সার রোগীদের বিশাল উপকার করা যায় এ ধরনের ধারণায় উৎসাহ বোধ করছেন অনেকেই। তারা ধারণাটিকে গ্রহণ করে জানিয়েছেন, ধারণাটি খারাপ না। তবে আরও চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে এটা নিয়ে। গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীদের মতামত জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, ধারণাটি খারাপ না। মাসে সাড়ে ২১ টাকা বছরে ২৫৮ টাকা ফোন থেকে যাবে।
এ টাকাটা খুব বেশি না। আমরা বাড়তি অথবা অযথাই কথা বলা বন্ধ করতে পারলে মাসে সাড়ে ২১ টাকা বাঁচাতে পারি। অথবা মাসে এই টাকাটা আমরা দিতেও পারি। অথবা এর সাথে অন্য কিছু যোগও করা যেতে পারে অথবা সরকার মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছ থেকে মাসে ১০ টাকা নিয়ে অবশিষ্ট টাকা মোবাইল কোম্পানি অথবা অন্য খাত থেকে জোগাড় করে দিতে পারে।
যেভাবেই হোক ধারণাটি খুবই চমৎকার। আমাদের চোখের সামনে কত ক্যান্সার আক্রান্ত চিকিৎসা করতে করতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অবশেষে বিনা চিকিৎসা মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলে ভালোই হবে।
মাসে ২১.৫০ টাকা যে কোনো ভাবে বাঁচিয়ে আমরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারি। ফলে দরিদ্র ক্যান্সার আক্রান্তরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি পরকালের নাজাতের একটা উপায়ও হতে পারে। তবে ব্যাপারটি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ হতে পারে এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে আরও সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত প্রস্তাব আসতে পারে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ নিজেদের গবেষণা ও বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানান, বাংলাদেশে রোগ চিকিৎসায় রোগীর পকেট থেকে প্রতি বছর ৭৩.৮৮ শতাংশ ব্যয় হয়ে থাকে। অবশিষ্ট ব্যয় সরকারি, আন্তর্জাতিক ও অন্যান্য মাধ্যমে হয়ে থাকে। রোগ চিকিৎসায় ব্যয় করতে গিয়ে বছরে ৩.৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে যায়।
হেলথ মরবিডিটি স্ট্যাটাস ২০১৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক হাজারে শূন্য দশমিক ৭১ জন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই হিসেবে বর্তমান জনসংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ৩০০ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত। তবে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ এন্ড ক্যান্সারের (আইএআরসি) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ মানুষ ক্যান্সারের আক্রান্ত। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এরপরই রয়েছে মুখ গহবর এবং নারীদের স্তনক্যান্সার।
সান নিউজ/এসএ