এমদাদুল ইসলাম
রাজধানী ঢাকার একটি পরিচিত এলাকা হাতিরঝিল। নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন, বিনোদন ও সাধারণের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে এটি। এক সময় এখানে ছিলো ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, ও গোটা এলাকা জুড়ে ছিলো বস্তি। সেখানে এখন গড়ে তোলা হয়েছে ছবির মতো একখণ্ড সৌন্দর্যবাগান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও এখন পর্যন্ত তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর 'স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন' (এসডব্লিউও)। এ প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা, বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাজধানীর যানজট নিরসন।
রাজধানীর তেজগাঁও সংলগ্ন বেগুনবাড়ি ও রামপুরা খালের সন্ধিক্ষণে বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে প্রকল্পটির অবস্থান। এক-এগারোর সেনা সমর্থিত রকারের আমলে নগরীর পরিবেশগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ লেক হিসেবে এই প্রকল্পটি গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়।
কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর অদ্যাবধি এটির রক্ষনাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ ঠিক মতো করেনি। সঠিক রক্ষনাবেক্ষণের অভাব ও দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় এর স্যুয়ারেজ লাইনগুলো অকেজো ও ভরাট হয়ে পড়ছে। ফলে এখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে- প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। তাই রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় স্যুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করা হয়নি। এ কারণে ড্রেনেজ লাইনে আবর্জনা জমে ধারণক্ষমতাও কমে গেছে।
শুষ্ক মৌসুমেও এখানে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর বৃষ্টি না হতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার (১ জনু) সকালে রাজধানীতে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্ট্রিপাত হয়ে হাতিরঝিল লেকটি পানিতে উপচে উঠে। আর এতে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্যুয়ার নেটওয়ার্কে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় এতে আশপাশের ময়লা পানিও ঢুকে যায়। এতে সমালোচনার ঝড় আরেও তীব্রতর হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হাতিরঝিল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় বিভিন্ন কাজের অনুকূলে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, লেকের শ্যাওলা ও ময়লা পরিষ্কার বাবদ ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং গুলশান বনানী-বারিধারা লেকের পাড় বাঁধাইয়ের জন্য ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকাসহ মোট ২ কোটি ৩৫ লাখ ৮ হাজার টাকার চাহিদা রাজউক বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এই অর্থের অনুমোদন না পাওয়ায় কাজগুলো করা সম্ভবপর হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুর রহমান বলেন,“রাজউক যদি- ‘হাতিরঝিল রক্ষনাবেক্ষণ করতে না পারে তাহলে আমাদের দিয়ে দিক। খালের মতো হাতিরঝিলের পুরো দায়িত্ব ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণসহ এর সৌন্দর্যবর্ধনেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ইতোমধ্যে ঢাকা ওয়াসা থেকে নগরীর খাল সমূহের রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) খালগুলোর উদ্ধার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরে প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
কাজেই কথা হলো- নগরীর খালগুলোর মতো লেকসমূহের রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বও কি সিটি করপোরেশনকে দেয়া সঠিক হবে? নাকি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা সৃষ্টি করা দরকার?
লেখক : এমদাদুল ইসলাম, প্রাক্তন প্রধান প্রকৌশলী
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
সাননিউজ/এনএম