বাণিজ্য

স্বাভাবিক হচ্ছে অর্থখাত!

রাসেল মাহমুদ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার প্রথমে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করলেও পরে আবার তা বৃদ্ধি করে। চলমান এই লকডাউন চলবে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময়ে কঠোর বিধিনিষেধ মানার কথা থাকলেও মূলত শিথিল হয়েই চলছে সবকিছু। তাই ক্রমে স্বাভাবিকতায় ফিরে আসতে শুরু করেছে অর্থনীতির সব শাখা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অর্থখাত মূলত ব্যাংক নির্ভর। তবে ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজার, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা বেশ গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। লকডাউনে সবগুলো প্রতিষ্ঠানই চলছে সীমিত পরিসরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইকোনোমিক সেক্টর বন্ধ থাকা মানে সব কিছুই স্থবির হয়ে পড়া। এর সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানি জড়িত। ফলে এগুলো চালু থাকা জরুরি।

ব্যাংক : গত ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া লকডাউনে প্রথম ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে সীমিত পরিসরে তা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ আড়াই ঘণ্টা লেনদেন হলেও ১৪ এপ্রিল থেকে লেনদেনের সময় বাড়ানো হয় আধা ঘণ্টা।
ব্যাংক খোলা রাখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুরোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে লেনদেন। তবে ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কাজ চলবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার পর তফসিলি ব্যংকগুলো কার্যত স্বাভাবিকভাবেই চলছে। বিভিন্ন ব্যাংক ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্প সময় ব্যাংক খোলা থাকায় গ্রাহক উপস্থিতি বেড়েছে। এতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হচ্ছে; অন্যদিকে সময় স্বল্পতার কারণে অনেক গ্রাহক সেবা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময় ব্যাংক খোলা রাখায় গ্রাহকে চাপ বেশি। অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকরা সেবা নিচ্ছে। এতে তাদের যেমন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি আমাদেরও জন্য ঝুঁকি।

পুঁজিবাজার : সরকার যখন ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয় তারপরই পুঁজিবাজার চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তখন জানান, সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যেও যথারীতি চলবে পুঁজিবাজারের লেনদেন।

তবে এর জন্য কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়। লেনদেনের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ খোলা থাকলেও সেখানে যাওয়া যাবে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাপের মাধ্যমে বা মোবাইল ফোনে অর্ডার দিতে হবে।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে, আড়াই ঘণ্টা ব্যাংক চালু রাখার সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এক সপ্তাহ লেনদেন চলে দুই ঘণ্টা করে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা। পরে ব্যাংক আওয়ার আধা ঘণ্টা বাড়ায় পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময়ও আধা ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, ব্যাংক চালু থাকার পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের লেনদেন চালু থাকবে। এরপর থেকে এই নিয়মেই চলছে পুঁজিবাজারের লেনদেন।

ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান : সর্বাত্মক লকডাউনে সীমিত আকারে ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনার আওতায় দিনে চার ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। বুধবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে।

জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ চলাকালেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো যে যার মতো খোলা রেখেছে। তবে বুধবার সার্কুলার দিয়ে খোলার বিষয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রাহকদের জরুরি আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে সীমিত আকারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালু থাকবে।

এতে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের হিসাবে মেয়াদপূর্তিতে স্থায়ী আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমাদান ইত্যাদি জরুরি আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ দুটি শাখা (একটি ঢাকায় ও অপরটি ঢাকার বাইরে) ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে প্রয়োজনীয় জনবলের বিন্যাস ও উপস্থিতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীয় বিবেচনায় সম্পন্ন করবে।

বীমা : সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ জনবল নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে চালু হয়েছে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা অফিস। সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাতে পারবে কোম্পানিগুলো। তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক নির্দেশনায় বিষয়টি জানানো হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেয়া করতে হবে। আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিগুলোকে এই নির্দেশনা মেনে অফিস পরিচালনা করতে হবে।

আইডিআরএ বলছে, আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধি-নিষেধ এবং পরবর্তীতে উক্ত সময়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনার নিমিত্তে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ কতিপয় শাখা চালু রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা প্রদান করেছে। দেশের আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি নৌ-বীমা পলিসি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

বিধায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং লাইভ বীমাকারীর মেয়াদপূর্তি ও মৃত্যুদাবি যথাসময়ে পরিশোধের স্বার্থে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাননিউজ/আরএম/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হেমন্তের মোড়ে আত্মীয...

সাজেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা 

জেলা প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটির সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ...

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি কাপ্তাই হ্রদে

জেলা প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে কাপ্তাই হ্রদে ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা