নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছর আমন মৌসুমে ১ কোটি ৫৫ লাখ টনের কিছু বেশি চাল উৎপাদন হয়েছিল। তবে চলতি আমন মৌসুমে বন্যায় ৩৫টি জেলার আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমন চালের উৎপাদন প্রায় ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টনে নামতে পারে। কিন্তু তাতে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনও আশঙ্কা নেই।
শনিবার ( ২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক মাস আগে ইরি/স্বর্ণা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা ও নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
এ হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, ইরি/স্বর্ণার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ আর পাইজাম/লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার যথাক্রমে ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বলে টিসিবি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি আমন মৌসুমে পরপর ৪ দফা বন্যায় আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৫ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হতে পারে কিন্তু যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ২৮ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও এই চক্রকে চালের দাম বাড়ানো থেকে নিবৃত রাখা যায়নি। এখন আমনের ভরা মৌসুমেও তারা চালের দাম বাড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে কয়েক জন অসৎ ব্যবসায়ী কারসাজি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
আমরা শিগিগরই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। তাদের অবৈধ ধান-চালের মজুত জব্দ করে তা সরকারের গুদামে নেওয়া হবে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল আমদানি শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই আরও ১ লাখ টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য ক্রয় কমিটি অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি। প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে ধান-চালের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো ঘটনা ঘটেছে। ধানের দাম গত মৌসুমের তুলনায় মণপ্রতি দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা বেশি। বেশি চালের দামও।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আমনের উৎপাদন কম ও সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসায় একটি সিন্ডিকেট চাল নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। তারা সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে। খাদ্য অধিদফতরের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের গুদামে ৭ দশমিক ৮৮ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।
এর মধ্যে চাল ৫ দশমিক ৫৬ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৩৩ লাখ টন। অথচ মাত্র এক মাস আগে গত ৫ নভেম্বর খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ২০ টন। আর গত বছর এই সময়ে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০ টন। এর মধ্যে চাল ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩০ টন এবং গম ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১১০ টন। এই হিসাবে গত প্রায় এক বছরের ব্যবধানে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত কমেছে ৮ লাখ ৮ হাজার ৮৪০ টন।
সূত্র জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও চলতি বছর দেশে ৪ দফা বন্যার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার এ বছর কর্মহীন, অসহায় মানুষদের প্রচুর পরিমাণে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। ফলে সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ দ্রুত কমেছে। আর সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ কমায় এর সুযোগ নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট।
সান নিউজ/এসএ