নিজস্ব প্রতিবেদক: ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলেও অল্পের জন্য আটকে গেছেন। তাদের পেছনে ঘুরছে দুদক। তাদে বিরুদ্ধে ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র বলছে, এসেব থেকে বাঁচতে তারা দেশ ছাড়ার জোর প্রসেস চালাচ্ছিলেন। মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলে এগিয়েও ছিলেন অনেকটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি।
এই দুজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুক্রবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানান, রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন সেজন্য বৃহস্পতিবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে মো. রাসেল লেখেন, আমি আমার বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পজিটিভলি দেখছি। বাংলাদেশের সব বড় কোম্পানির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। হয়তো আমাকে ভালোবাসার জন্য ওনাদের ভয়ের বিষয়টা আমাকে বলতেন না। আমরা বিজনেস করেছি সবার সঙ্গে। এখন ওনারা আরও বেশি কনফিডেন্স পাবেন।
তিনি বলেন, এখন আমরা অনেকটাই প্রফিটে বিজনেস শুরু করেছি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা আমাদের হাতে আসার সুযোগ নাই। এছাড়া তদন্ত করলেই সবাই দেখবেন পুরাতন অর্ডার কী পরিমাণ ডেইলি যাচ্ছে। বিজনেস ডেভেলপমেন্টে লস হয়েছে, সেটা বিজনেস করেই প্রফিট করে ফেলব, এর চেয়ে কম সময়ে। কারণ আমাদের ক্রয় মূল্য বাজার মূল্য থেকে অনেক কম। সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমি শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করব যে, আমাদের তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলবেন না। আপনাদের রেগুলার কেনাকাটা ইভ্যালিতে করুন। এতে ইভ্যালির লসের যৌক্তিকতা আসবে। কখনও কোনো দেশের মাল্টিপল ভিসা ছিল না, এখন কোনো ভিসাও নাই এবং কখনও কোনো সিটিজেনশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করি নাই। ঘুরতে গিয়েছিলাম কয়েকবার। দেশ আমাদের। আমরা সবাই দেশের জন্যই কাজ করতে চাই। দোয়া রাখবেন।
দুদক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বলেন, ইভ্যালি ডটকমের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপনে দেশ ত্যাগের প্রচেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ দেশত্যাগ করলে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যহত হতে পারে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের বিদেশ গমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্ট থেকে অনুমোদন নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আদালতের অনুমতি নিয়ে দিতে হবে, আরেকটি রায় আছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
দুদকের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইভ্যালির এমডি মোহম্মাদ রাসেলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এটি বন্ধ পাওয়া যায়।
দুদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে একটি প্রতিবেদন দেয়।
এই প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ দেখা যায়, ইভ্যালি ডটকমের মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
উক্ত তারিখে ইভ্যালি ডটকমের গ্রাহকের নিকট দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকের নিকট থেকে অগ্রিম হিসেবে গৃহিত ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির নিকট কমপক্ষে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নিকট সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।
সান নিউজ/এমআর