গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর সাহেব
মতামত

মগের মুল্লুকের হিংস্র মগদের বংশধর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর:

গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ, বিশেষ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরের কথা ছিলো। কিন্তু তিনি আসতে না পারায় তার বদলে বাংলাদেশে এলেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবু বকর সাহেব।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা গণহত্যার যেসব ভয়ঙ্কর বিবরণ দিলেন, সেটা ছিলো আইনমন্ত্রী আবুবকর সাহেবের টিভিতে দেখা বা পত্রিকায় পড়া খবরের চাইতেও বহুগুণ ভয়ঙ্কর। মগের মুল্লুকের হিংস্র মগদের বংশধর বার্মিজ সেনাবাহিনী কিভাবে কোলের শিশুদের বাবা মায়ের সামনেই জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে, কিভাবে হাজার হাজার মানুষ মেরে এলাকার পর এলাকা বিরান করে ফেলা হয়েছে এসবের বিবরণ ওনার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর সাহেব যথেষ্ট হৃদয়বান একজন মানুষ।নিজের দেশেও তিনি এককালে একনায়কতান্ত্রিক সরকারের ভয়ঙ্কর নির্মমতা খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং নিজেও এর শিকার হয়েছেন ওনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনকে যখন তখন সরকারের সমালোচনা করার কারণে গ্রেফতার বা নিখোঁজ হয়ে যেতে দেখতেন তাদের লাশও অনেকসময় খুঁজে পাওয়া যেতো না।

বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব আবুবকর এসব সহ্য করতে না পেরে অবশেষে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। অমানুষিক পরিশ্রম আর আপ্রাণ চেষ্টায় গড়ে তোলেন আইন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। রুয়ান্ডাতে ১৯৯৪ সালের যে ভয়ঙ্কর গণহত্যায় একশো দিনে আট লাখ (৮,০০০০০/-) এবং কয়েক দশকে পঞ্চাশ লাখ (৫০,০০০০০/-) মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিলো, সেই দুনিয়া কাঁপানো গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালেও একসময় তিনি প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান।সেই ভয়ঙ্কর গণহত্যার মহাপরাক্রমশালী হোতাদের শাস্তি দেওয়ার পেছনে ওনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নাছোড়বান্দা মনোভাব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অপরদিকে নিজের দেশের নৃশংস একনায়ক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার সুদীর্ঘ বাইশ বছরের (১৯৯৪- ২০১৬) রক্তাক্ত দুঃশাসন অবশেষে একসময় সহিংস অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কোন এক দম আটকানো দুঃস্বপ্নের মতোই শেষ হয়।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবুবকর দেশে ফেরার পর ওনার অসাধারণ গৌরবময় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের কারণে ওনাকে ডেকে নিয়ে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।রোহিঙা ক্যাম্পে এসে রুয়ান্ডার সেই পৈশাচিক গণহত্যার বিচারের স্মৃতি ওনার মনে আবারো জেগে উঠলো। রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার সামনে জনগণ কতখানি অসহায় হতে পারে এবং নির্মম নৃশংস ধরপাকড়, গুমখুন আর তীব্র আতঙ্কের মুখে আচমকা ঘটিবাটি নিয়ে দেশ ছাড়তে হলে কেমন অসহায় শূণ্যতা বোধ হয় এটা তিনি বহু আগে থেকেই হাড়ে হাড়ে জানতেন। সুতরাং এই বিষয়গুলো তার বিবেক আর আত্মার মধ্যে যেয়ে অনবরত শূলের মতো বিধতে লাগলো। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন যে, এতো বড়োমাপের একটা গণহত্যা হচ্ছে অথচ এর বিচারের জন্য কোনো দেশেরই আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার তেমন কোনো আগ্রহ বা নড়াচড়া নেই।

অপরদিকে তার দেশ গাম্বিয়া হচ্ছে আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশ। জনসংখ্যা মাত্র ২১ লাখ। আয়তন প্রায় চার হাজার বর্গমাইল। গাম্বিয়া বাংলাদেশের চাইতেও অনেক দরিদ্র এবং অনুন্নত দেশ। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ যেখানে ১৩৪ এ, গাম্বিয়া সেখানে ১৭৪ এ।তাছাড়া মিয়ানমার থেকে এটা সাত হাজার মাইল দূরে অবস্থিত।রোহিঙা ইস্যুতে এটি কখনোই কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।সুতরাং এখানে তিনি কিছু করতে গেলে বিষয়টা অনেকটা হাতি ঘোড়া গেলো তল, ব্যাঙ বলে কত জল ...... টাইপ হয়ে যায়। তবুও আবুবকর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন যে রোহিঙাদের গণহত্যার বিচারের জন্য এবং রোহিঙাদের নিজের দেশে নিরাপদে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়াকে পক্ষ করে মামলা করার চেষ্টা করবেন। কারণ আন্তর্জাতিক আদালত বা International Court of Justice (ICJ) তে কোন ব্যক্তি এককভাবে মামলা দায়ের করতে পারেনা। সেখানে মামলা দায়ের করতে হয় রাষ্ট্রকে।নিজের দেশে যেয়ে তিনি সরকারকে খুব সিরিয়াসলি বোঝালেন যে আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলা দায়ের করার মাধ্যমে গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং উজ্জ্বল হবে। এছাড়া এই মামলার ক্ষেত্রে ওআইসিও নিশ্চয়ই সহায়তা করবে।

অপরদিকে কেউ কেউ মামলা করতে জোরগলায় নিষেধ ও তীব্র বিরোধিতা করে বললো যে, এই মামলা করলে চীনের সঙ্গে গাম্বিয়ার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে।কারণ ইসরায়েল যেমন আমেরিকার প্রিয় এবং অতিপ্রবল সমর্থনপুষ্ট, তেমনি মিয়ানমারও চীনের পরম প্রিয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাছোড়বান্দা আবুবকর সাহেব গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আদোমা বারোকে ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে বোঝাতে সমর্থ হলেন।অন্য কেউ এসব বললে হয়তো গাম্বিয়ার সরকার বা রাষ্ট্রপতি এতো গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু আইনমন্ত্রী আবুবকর সাহেব অস্থায়ী আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সফল আইনজীবী। ওনার কথার তো একটা আলাদা ওজন আছে। সুতরাং ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে শেষমেষ মামলাটা ঠুকেই দিলো।হতদরিদ্র দেশ হলেও গাম্বিয়া বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ধরণের কৃপণতা করলো না। আমেরিকার ৭৭ বছরের পুরানো বিখ্যাত এবং বনেদী ল ফার্ম ফলি হোয়াগকে নিযুক্ত করা হলো এই মামলায় সহায়তা করার জন্য। সঙ্গে থাকলেন যুক্তরাজ্যের আরেক অতি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন বিশারদ ইউসিএল এর প্রফেসর ও ব্যারিস্টার ফিলিপ স্যান্ডস কিউসি। ফিলিপ নিজের দেশ এবং আমেরিকার যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে মতামত দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করার পর উভয় দেশের আইনসভাতেই সাক্ষ্য দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন। পৃথিবীর অনেকগুলো শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভিজিটিং স্কলার তিনি। এছাড়া ইরানী বংশোদ্ভূত আরেকজন হার্ভার্ড এডুকেটেড যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞ আইনজীবী পায়াম আখাভানকে গাম্বিয়া নিয়োগ করলো।গাম্বিয়া মূলতঃ পাঁচটা বিষয়ে বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে দাবী তুলেছে।

সহজ ভাষায় বা সংক্ষেপে বলতে গেলে

এক নম্বর দাবী হচ্ছে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহিসংতা বা গণহত্যা বন্ধ করার আদেশ দিতে হবে।

দুই নম্বর- মিয়ানমারের কোনো মিলিশিয়া বা কোনো সংগঠন রোহিঙাদের উপর সহিংসতা বা গণহত্যা করলে সেটি বন্ধ করতে হবে।

তিন নম্বর- রোহিঙা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত যেতে দিতে হবে।

চার নম্বর- মিয়ানমারে রোহিঙা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

পাঁচ নম্বর- মিয়ানমারকে রোহিঙাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ডিসেম্বরে প্রাথমিক শুনানি হলো।

মিয়ানমারের পক্ষে সদলবলে হাজির হলেন স্বয়ং অং সান সুচি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিখ্যাত নেত্রী। আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানির সময় মিয়ানমার যথারীতি গণহত্যার অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করলো। মিয়ানমার বললো জঙ্গি দমন করতে গিয়ে হয়তো তাদের সেনাবাহিনী বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে এই আরকি; আর রোহিঙারা তো আসলে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী যাদের নিজের দেশে ফেরত দেওয়া হয়েছে মাত্র। পাশাপাশি মিয়ানমার আরো বললো এই মামলা দায়ের করার আইনগত যোগ্যতা তথা locus standi গাম্বিয়ার নেই, কারণ গাম্বিয়ার কোন নাগরিক বা গাম্বিয়া তো আর রোহিঙা সংক্রান্ত ঘটনায় কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সুতরাং তারা সে কারণে কোনোভাবেই এই মামলায় পক্ষ হতে পারবেন না।

অপরদিকে গাম্বিয়া গণহত্যার বিভিন্ন ছবি, ভিডিও, লিখিত সাক্ষ্য, বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে প্রদর্শিত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট বেশ গুছিয়ে উপস্থাপন করে। এই গণহত্যাকে তারা সমগ্র মানবতা ও মানবজাতির সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করে মর্মস্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে।এসব প্রাথমিক শুনানির পর এবং মামলার গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উভয় দেশের যুক্তি তর্ক শোনার পর আন্তর্জাতিক আদালত ২০২০ সালের ২৩শে জানুয়ারী একটা আদেশ প্রদান করেন।সেই আদেশের মধ্যে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যা আন্তর্জাতিক আদালতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং যুগান্তকারী। সেখানে International Court of Justice (ICJ) বলে যে গণহত্যার ক্ষেত্রে মামলা দায়েরকারী পক্ষকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ হবার কোনো দরকার নেই; গণহত্যার ক্ষেত্রে যেকোনো দেশই বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে। এক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা রাষ্ট্রকে শুধু ১৯৪৯ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হতে হবে। যেহেতু গাম্বিয়া সেখানে সই করেছিলো সেহেতু তারা এই মামলা করতেই পারে এবং এই আদালতও এর বিচার করতেই পারেন।মিয়ানমারকে রোহিঙাদের প্রতি সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয় এবং রোহিঙাদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে ৪ মাস পর রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। যতদিন এই মামলা চলবে মিয়ানমারকে ততদিন ধরে ৬ মাস পরপর আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙা পরিস্থিতির উপর বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে হবে।পাশাপাশি সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট না করবার বিষয়ে সাবধান করে দেওয়া হয় এবং সেগুলো সংরক্ষণের আদেশ দেওয়া হয়।

এর ছয় মাস পর গাম্বিয়াকে মামলার পক্ষে "memorial" দাখিল করতে বলা হয় এবং মিয়ানমারকে এর এক বছর পর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৫শে জানুয়ারী সেটার response হিসেবে "counter- memorial" দাখিল করার আদেশ দেওয়া হয়।মজার বিষয় হচ্ছে ICJ এই মামলায় পক্ষভুক্ত হবার বিষয়ে locus standi শিথিল করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরে এই মাসের মানে সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আরো দুইটি দেশ তথা কানাডা ও নেদারল্যান্ডস এই মামলায় গাম্বিয়ার সঙ্গে এই মামলায় বাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হয়েছে। ফলে গাম্বিয়ার উপরে চাপ অনেক কমে গেলো।

গাম্বিয়া ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলা দায়ের করার এগারো দিন পর মানে ২২শে নভেম্বর, International Criminal Court (ICC) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চীফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা ঘোষণা দেন যে, ওনারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছেন।

এই তদন্ত শুরুর বিষয়ে ফাতু বেনসুদা ২০১৯ সালের জুন মাসে ICC র বিচারকদের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুমতি চান। সেটি প্রাথমিক অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনার পর অক্টোবর মাসে মঞ্জুর হয়েছিলো। মজার বিষয় হচ্ছে এই ফাতু বেনসুদাও মুসলিম রাষ্ট্র গাম্বিয়ার নাগরিক ও সাবেক আইনমন্ত্রী।আরো মজার বিষয় কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র এই ফাতু বেনসুদার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওনাকে এখন থেকে আর সেখানকার ভিসা দেওয়া হবেনা। ওনার কোন সম্পত্তি বা ব্যাংক একাউন্ট আমেরিকায় থাকলে সেটা সীজ করা হবে।

কারণ ?!!!

কারণ হচ্ছে তিনি আফগানিস্তানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের বিষয়ে আমেরিকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।এই ঘোষণা তিনি আইসিসির পক্ষ থেকে তালেবান এবং আফগানিস্তানের জাতীয় সেনাবাহিনীর (ANA) বিরুদ্ধেও দিয়েছেন। তালেবান বা ANA এতে উত্তেজিত হবার কোনো খবর না পাওয়া গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘোষণায় মারাত্মক উত্তেজিত এবং অস্থির হয়ে পড়েছেন।কার এতোবড় সাহস যে আমেরিকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে? কে এই ফাতু বেনসুদা?International Criminal Court আন্তর্জাতিক চুক্তি Rome Statute দ্বারা ২০০২ সালে গঠিত একটি স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক আদালত।

মজার বিষয় হচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল - এরা কেউই Rome Statute এ সই করেনি এবং ICCর সদস্য দেশ হতে রাজি হয়নি।বাংলাদেশ আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগে, মানে ২০১০ সালে ICCর ১১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রাষ্ট্র যা ICCর সদস্য পদ গ্রহণ করেছে।ICC হচ্ছে সেই আদালত যা যুদ্ধাপরাধের কারণে কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উহুরু কেনিয়াততা, আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রপতি লরা বাগবো, সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল বশির, লিবিয়ার রাষ্ট্রপতি গাদদাফি - এরকম অনেক ভিআইপি লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং পরিচালনা করেছে।যারা মনে করছেন যে এসব আদালত পুরোপুরি ইউসলেস বা আজ পর্যন্ত কোন গণহত্যাকারীকে শাস্তি দিতে পারেনি তারা হয়তো বসনিয়ার যুদ্ধাপরাধী শীর্ষ নেতাদের পরিণতি জানেন না। খোদ ইউরোপের বুকে অবস্থিত বসনিয়ার সেই বিশাল গণহত্যার ঘটনা নিশ্চয়ই জানা আছে? এক লেখাতে পড়েছিলাম যে বসনিয়ার গোরস্থানে অসংখ্য কবরে কোনো লাশ নেই, শুধুমাত্র নামফলক বানিয়ে রাখা আছে।কারণ গণহত্যার পর লাশগুলো জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হতো যেনো বনের পশুরা হাড়গোড়সহ লাশ ছিড়েখুরে খেয়ে সেগুলোর নিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলে।

সেই গণহত্যার কসাই বলে পরিচিত বসনীয় সার্বিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রপতি ( President of Republica Srpska) রাদোভান কারাদজিক, প্রধান সেনাপতি রাদকো ম্লাদিচ এবং মদদদাতা সার্বিয়ান রাষ্ট্রপতি স্লোবোদান মিলোসেভিচ - এরা তিনজনেই মোট ১৬১ জন সহ ক্ষমতা হারানোর পর বিচারের মুখোমুখি হন। দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে বেনামে পালিয়ে থাকার পর তারা অবশেষে একে একে ধরা পড়েন। এদের ধরার বিষয়ে সার্বিয়ান সরকারের উপরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ ও শর্ত ছিলো যে এদের না ধরলে সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য পদ পাবে না। এছাড়া রায়ের আলোকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের সম্পদ ও লোকজনের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে।

এদের বহুদিন খোঁজাখুঁজি করে ধরতে পারার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে গঠিত অস্থায়ী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল International Crimes Tribunal for former Yugoslavia (ICTY) তে নেওয়া হয়। একজন বিচারের সময় মারা যায়। বাকি দুইজনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি নেই।গণহত্যা করা একটা সরকার আর তার লোকজন এটা বিশ্বাসই করতে পারেনা যে তাদের ক্ষমতা কখনো চলে যেতে পারে। ওনারা এক ধরণের ইলিউশনে থাকেন যেটা হচ্ছে ইলিউশন অফ পারমানেনসি বা চিরস্থায়ীত্ত্বের বিভ্রম। কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায় যে, এক পর্যায়ে যেয়ে তাদের নিখুঁত ছকের সব হিসাব রাতারাতি উল্টে যায়।

একটা কথা আছে - "Justice comes with leaden feet, but strikes with iron hand." ( ন্যায়বিচার ধীর পায়ে আসে, কিন্তু লোহার হাত দিয়ে আঘাত করে) আরেকটা কথা শুনেছিলাম। "There is no justice in this world. Thats why we have to create it." - George RR Martin.

ন্যায়বিচার দুনিয়ায় এমনি এমনি আসেনা। এজন্য এটা মানুষকেই সৃষ্টি করতে হয়।

গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী Abubacarr Tambadou সাহেবকে বাংলাদেশের তেমন কেউ চেনেনা।উনি এটাও নিশ্চিত করে জানেন না যে এই মামলার চুড়ান্ত রায় এবং পরিণতি কি হবে।কে জানে নিজের দেশের অনেক লোকজন হয়তো ওনাকে এবং ওনার সরকারকে ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর জন্য তথা হতদরিদ্র রাষ্ট্র গাম্বিয়ার এতো অর্থ এই আন্তর্জাতিক মামলার পেছনে খরচ করাকে আড়ালে এবং প্রকাশ্যে সাদা হাতী পোষা কিংবা গরিবের ঘোড়া রোগ বলে সমালোচনা বা গালিগালাজ করে যাচ্ছে।

গণহত্যার বিবরণ বা বিচারের খবর অপ্রীতিকর বলে এগুলোর বিষয়ে সাধারণতঃ অধিকাংশ মানুষেরই তেমন কোনো আগ্রহ থাকেনা।তবে একটা কথা ঠিক যে এরকম মানুষের কাছে সম্ভবতঃ বাহবা, পরিচিতি বা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার চাইতেও ইনসাফ কায়েম করাটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। ওনাদের সীমিত ও ক্ষুদ্র সাধ্যের মধ্যে ওনারা সেটার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করে গেছেন।ওনাদের তৈরী করা পথে সহযোগী হিসেবে আরো দুইটি দেশ ওনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। হয়তো সামনে আরো দেশ যোগ দেবে। ফুটবল বা সিনেমার সুদর্শন সেলিব্রিটিদের মতো এতো জনপ্রিয় বা পরিচিত না হলেও অনেকের কাছেই ফাতু বেনসুদা কিংবা এই আবুবকর হচ্ছেন প্রকৃত বীর।

আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও উদাসীন মানুষে ভরপুর এই পৃথিবী এরকম কিছু মানুষের জন্যই হয়তো এখনো বসবাসের যোগ্য।

The Second Coming
--------------- W.B Yeats

Turning and turning in the widening gyre
The falcon cannot hear the falconer;

Things fall apart; the centre cannot hold;
Mere anarchy is loosed upon the world,
The blood-dimmed tide is loosed, and everywhere
The ceremony of innocence is drowned;
The best lack all conviction, while the worst
Are full of passionate intensity.

Surely some revelation is at hand;
Surely the Second Coming is at hand.

The Second Coming! Hardly are those words out
When a vast image out of Spiritus Mundi
Troubles my sight:

somewhere in sands of the desert
A shape with lion body and the head of a man,

A gaze blank and pitiless as the sun,
Is moving its slow thighs, while all about it
Reel shadows of the indignant desert birds.

The darkness drops again; but now I know
That twenty centuries of stony sleep
Were vexed to nightmare by a rocking cradle,
And what rough beast, its hour come round at last,
Slouches towards Bethlehem to be born?

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা