আন্তর্জাতিক

ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭ আসলে কতটা ভয়ঙ্কর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতজুড়ে দিনরাত অবিরাম জ্বলছে চিতা, করোনায় মৃতদের পোড়াতে টানা কাজ করছেন কর্মীরা

করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণের মুখোমুখি ভারতজুড়ে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের শয্যা, অক্সিজেন এবং ওষুধের ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির আকাশ।

এমনকি মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে করোনায় আক্রান্তদের মরদেহ সৎকার না করেই নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন স্বজনরা। দেশটির উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে কয়েক ডজন মরদেহ গঙ্গায় ভাসতে দেখা গেছে গত দু’দিনে। ভারতজুড়ে করোনা যে মারাত্মক প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে সেই চিত্র তুলে ধরছে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের এই দৃশ্য।

দেশটির বিজ্ঞানীরা করোনার লাগামহীন উত্থানের কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা শুরু করেছেন। বিশেষ করে ভারতে শনাক্ত হওয়া দু’বার রূপান্তরিত নভেল করোনাভাইরাসের একটি ধরন দেশটিতে মহামারির বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কি না সেটি জানার চেষ্টা করছেন তারা।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির নাম বি.১.৬১৭। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার এই ধরন; যা বাড়িয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক উদ্বেগ।
ভারতে শনাক্ত ভ্যারিয়েন্টটি আসলে কী?

ভারতের জ্যেষ্ঠ ভাইরোলোজিস্ট শহীদ জামিল বলেন, করোনাভাইরাসের বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টটির বাইরের ‘স্পাইক’ অংশে দু’টি মূল রূপান্তর ঘটেছে; যা মানবদেহে অধিক সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাসের বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টটির মূল অংশ ভারতে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। যদিও এই ধরনটির আগের একটি সংস্করণ একই বছরের অক্টোবরে দেশটিতে শনাক্ত হয়েছিল।

সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতে শনাক্ত ‘ডাবল মিউট্যান্ট এই ধরনকে’ বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া ধরনের কথাও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনাভাইরাস মহামারির টেকনিক্যাল প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছেন, প্রাথমিক কিছু গবেষণায় ভারতীয় ধরনটির সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে। তবে এটা কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সে বিষয়ে বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর জন্য আরো তথ্য দরকার।

ভারতে করোনার ভয়াবহ উল্লম্ফনের নেপথ্যে বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট?

এটা বলা এই মুহূর্তে বেশ কঠিন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ল্যাবরেটরিতে সীমিত নমুনা পরীক্ষায় ভাইরাসটির সংক্রমণের সক্ষমতা যে বেশি; সেই ইঙ্গিত মিলেছে।

আসলে এই চিত্র এখনও জটিল। কারণ যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া অতি-সংক্রামক আরেকটি ধরন বি.১১৭ ভারতের কিছু অংশে মহামারি বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে— বলছে ডব্লিউএইচও।

ভারতের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক সুজিত কুমার সিং বলেছেন, গত মার্চের দ্বিতীয়ার্ধ্বে শুধুমাত্র দিল্লিতেই যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত এই ধরনটি ভারতে প্রথম পাওয়া যায় পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে। করোনাভাইরাস মহামারিতে ভারতের এই রাজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত রোগ মডেলবিদ ক্রিস মুরে বলেছেন, ‌অত্যন্ত স্বল্প সময়ে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে— দেশটিতে প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমিত জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিচ্ছে একটি ধরন।

তিনি বলেন, এই ধরনটি বি.১.৬১৭ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভারতে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং সংক্রান্ত ডেটা খুবই অপ্রতুল বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মুরে। তিনি বলেছেন, দেশটিতে করোনার উত্থানের নেপথ্যে যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনও ভূমিকা রাখছে।

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যর্থতার সমালোচনা রয়েছে দেশটিতে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশটিতে বিশাল বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ ও ধর্মীয় সমাগম হয়েছে। এই অনুষ্ঠানগুলোকে করোনার ‌‘সুপার স্প্রেডার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভ্যাকসিনে দমবে বি.১.৬১৭?

একটি আশার আলো হচ্ছে— করোনার ভ্যাকসিনগুলো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।

হোয়াইট হাউসের করোনা মহামারিবিষয়ক কমিটির প্রধান ও মার্কিন শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, ল্যাবরেটরি গবেষণায় প্রাথমিকভাবে ভারতে তৈরি টিকা কোভ্যাক্সিন ভারতীয় ধরনটিকে নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, তারা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। তবে ভারতীয় এবং অন্যান্য দু’টি ধরন তীব্র অসুস্থতা তৈরি কিংবা ভ্যাকসিনকে কম কার্যকর করতে পারে এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ব্রিটেনের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ক্রিস হুইটি বলেছেন, আমাদের মত হলো— এটি উচ্চ সংক্রামক ধরন। তবে অন্যান্য ধরনের তুলনায় ভারতীয় ধরনটি টিকাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম; তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

সূত্র: এএফপি, আলজাজিরা।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা

ভোলা প্রতিনিধি: ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট ব...

সম্মিলনী বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুর জেলার সদর ইউনিয়...

বাংলাদেশ স্কাউট দিবস ২০২৪ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে অনুষ্...

ভাসানচরে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যা...

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক : দেশে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। আর এই গরমে সবচেয়ে ব...

রাজধানীতে শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ভাষানটেক এলাকার ১৩ নম্বর কালভার্ট...

মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন...

পুকুরে ভাসছিল শিশুর মরদেহ

জেলা প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে পুকুর থেকে এক শিশু...

কেনিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হেলিকপ্টার বিধ...

ইরানে ইসরালি হামলা 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এবার ইরানে ইসরায়েলিরা হামলা চালিয়েছেন। এক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা