রাসেল মাহমুদ : করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণকারী সবার মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও কিছু সংখ্যক মানুষের মাঝে কিছুটা পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন নেয়া অনেকেই জানিয়েছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কারো হালকা জ্বর, শরীর ব্যাথা, বমি বমি ভাব এবং কারো কারো র্যাশ ওঠেছে। তবে তা গুরুতর নয়।
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দেশে শুরু হয় বহুল প্রতিক্ষিত করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম। ওইদিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর দিন মোট ২৬ জন টিকা গ্রহণ করেন। এরপর সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। এরমধ্যে টিকা নিয়েছেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ২৩ হাজার ৫১৬ জন আর মহিলা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭ জন। এতো সংখ্যক মানুষ টিকা নিলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখিন হয়েছেন মাত্র ৪৯০ জন। তবে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে এমন খবর মেলেনি।
টিকা গ্রহণকারী এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে সাননিউজ। তারা জানিয়েছেন, কারো হালকা জ্বর, শরীর ব্যাথা, বমি বমি ভাব এবং কারো কারো র্যাশ হয়েছে। কয়েকজন জানিয়েছে টিকা নেয়ার স্থান ফুলে গেছে। এছাড়া গুরুতর সমস্যার কথা কেউ বলেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনার টিকা প্রয়োগের পর গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর তাদের কাছেও নেই। তবে কিছু টিকা গ্রহীতার মাঝে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে বলে জানিয়েছে তারা। এটা স্বাভাবিক বলেও মনে করছে অধিদপ্তর।
প্রথমদিন টিকা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে টিকা দিলে স্বাভাবিক কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন—জায়গাটা ফুলে যায়, লাল হয়, সামান্য জ্বর হয়। এটা আসলে খুব স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়েছেন জামশেদ আলম। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর হালকা একটু ব্যথা হচ্ছিলো। এছাড়া প্রথম দিনে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে দ্বিতীয় দিন গা ব্যথা আর হালকা জ্বর ছিলো। একদিন রেস্ট করার পরই ঠিক হয়ে গেছে।
জামাল হোসেন নামের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, টিকা নেয়ার দিন তার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে দ্বিতীয়দিন দুবার বমি হয়েছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টিকা নেন গৃহিনী সালমা খাতুন। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর রাতে হালকা জ্বর এসেছিলো। তবে পরের দিনই ঠিক হয়ে গেছে। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
টিকা নেয়ার পর শরীরে হালকা র্যাশ দেখা দেয় গাড়িচালক মাজেদ মিয়ার। তিনি বলেন, টিকা প্রয়োগের স্থানটা লাল হয়ে ফুলে গিয়েছিলো। শুরুতে ভয় পেলেও পরে ঠিক হয়ে গেছে।
জাকির হোসেন সজিব নামের একজন টিকা গ্রহণকারী বলেন, টিকা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ। টিকা নেয়ার পর শরীর আগের চেয়ে ফ্রেশ লাগছে।
রাজবাড়ীর পাংশার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এম কে মাহফুজা। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর দুদিন ব্যাথা ছিলো। পরে সেরে গেছে।
জানা গেছে, করোনার টিকা নিলে মাথাব্যথা, হালকা জ্বর, যেখানে টিকা দেয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা বা কারও কারও বমিও হতে পারে এমন আভাস আগেই দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সাননিউজ/আরএম/আরআই