সফিকুল ইসলাম সবুজ : চলমান করোনা মহামারিতে ভারতীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত দু’দেশের মধ্যে। ভারতের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়াল্লা বার্তা সংস্থা এপি-কে বলেন, “রোববার (৩ জানুয়ারি) ভারতীয় নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু শর্ত হলো, ঝুঁকিতে থাকা ভারতীয় জনগণের জন্য ডোজ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ভ্যাকসিন রফতানি করতে পারবে না সেরাম ইন্সটিটিউট।”
অবৈধ মজুত ঠেকাতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ভারত সরকারের কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করতে পারব। এই মুহূর্তে বেসরকারি বাজারে এই ভ্যাকসিন বিক্রি করতে পারব না।”
অন্যদিকে সেরাম ইন্সটিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন বিবিসিকে জানিয়েছেন, “টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ তাদের টিকা রফতানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অন্যদেশে টিকা রফতানির অনুমতি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েকমাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।”
সেরাম ইন্সটিটিউটের এ রকম স্টেটমেন্টের পরেও ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা ছাড়ছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশি অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস পৃথকভাবে গণমাধ্যমের সামনে যথাসময়ে এই ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমবার (০৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করতেই পারি। যথাসময়ে আমরা ভ্যাকসিন পাবো। এই চুক্তির কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।”
শুধু বাংলাদেশ নয়, এই ভ্যাকসিন নিতে ভারতের সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশ চুক্তি করেছে বলেও এসময় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিনের আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় ভারত থেকে সঠিক সময়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সোমবার (০৪ জানুয়ারি) সকালে জানান, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন ভারত রফতানি না করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ভারতের কাছ থেকে করোনার ভ্যাকসিন আনতে দিল্লির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছে ঢাকা। শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে সেরাম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশি অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, “বাংলাদেশ যথাসময়েই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাবে। ভারতের ভালো প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।”
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, “বেক্সিমকো ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে করা চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে যে, স্থানীয় অনুমোদনের পর (বাংলাদেশ অনুমোদন দিলে) সেরাম ইনস্টিটিউট এক মাসের মধ্যেই প্রথম ধাপের ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।”
আমরা যা বুঝতে পারছি তা হলো, ওই বিবৃতিটি সর্বজনীন। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছি এবং যথাসময়েই ভ্যাকসিন পাব- বলেন রাব্বুর রেজা।
ভারত কর্তৃক ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বেক্সিমকো সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না, জানতে চাইলে রাব্বুর রেজা বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা সেরামের যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তারা জানিয়েছেন যে, তারা এখনো সরকার কিংবা সেরামের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরণের নির্দেশনা পাইনি।”
আগামী মাসের শুরুতে এই সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকেই বাংলাদেশের ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা সিরামের অ্যাকাউন্টে গতকাল রোববার জমাও দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু পরদিনই টিকা রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবর এলো।
সান নিউজ/এস