নিজস্ব প্রতিবেদক : সপ্তাহ ঘুরলেই বাড়ছে দেশের খুচরা বাজারে খোলা ভোজ্য তেলের দাম। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে। আর পাইকারিতে মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। পাইকারি ও খুচরায় মিলে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ২৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ সর্বোচ্চ। তবে বোতলজাত সয়াবিনের দাম আগের মতোই রয়েছে।
শুক্রবার ( ৮ জানুয়ারি) রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৪ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ১১৮-১২০ টাকা ছিল। মৌলভীবাজারে পাইকারিতে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা মণ (৩৭.৩২ কেজি) বা ১১৮ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে পাইকারিতে ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা মণ বা ১১২ টাকা কেজি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ সময় খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯১-৯৩ টাকা লিটার।
সয়াবিনের মতো পাম তেলের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা মণ, যা গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কম ছিল। খুচরায় পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা লিটার। ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কম।বাজারের সঙ্গে সমন্বয় হওয়ায় দেশের বাজারেও ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। এর একটি কারণ করোনা মহামারি। দ্বিতীয়টি হলো চীনের বেশি হারে কেনা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া দামের নাগাল পাওয়া সম্ভব না। ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্য তেলের ওপর শুধু আমদানি পর্যায়েই ভ্যাট নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিট্যাবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন।
আবেদনে সংগঠনটি জানায়, বর্তমানে ভোজ্য তেলের মধ্যে সয়াবিন, পাম ও পাম অলিন তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি), উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বিক্রয় ও সরবরাহ পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে বোতলজাত তেলের দাম বাড়ানোর কোনও ঘোষণা মিল মালিকরা দেননি।
মালিবাগ বাজারের নুসরাত স্টোরের মালিক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘বাজারে চাহিদামতো মাল (সয়াবিন তেল) পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাম বাড়তি। আমার আগের মালই রয়েছে, তাই ১২২ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। দাম বাড়লেও বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনও সংকট নেই বলে জানান পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা।
তিনি বলেন, ‘তেলের বাজার ভয়াবহ খারাপ। দাম বাড়ছেই। ২৫ বছরের মধ্যে তেলের বাজারে এত দাম আর কখনও হয়নি। গোলাম মওলা বলেন, ‘ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আমদানির বড় বাজার। এসব দেশে করোনার কারণে উৎপাদন কম। এ ছাড়া চীন এবার ব্যাপক হারে তেল কিনেছে। ফলে সংকটের মধ্যে আরও সংকট তৈরি হয়েছে।’ মিলমালিক ও সরকার পদক্ষেপ নিলে দামের হ্রাস টানা যেতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।
তেলের মতো চিনির দামও বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। চিনি এখন ৬৪-৭০ টাকা কেজি। অবশ্য কমেছে মসুর ডালের দাম। মোটা দানার মসুর ডাল কেজিতে ৫ টাকা কমে এখন ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার দেশি ডাল কেনা যাচ্ছে ১০৫ টাকা কেজিতে। চলতি সপ্তাহে কমেছে পেঁয়াজ, আলুসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন ৪০ টাকা। আদা-রসুনের দাম স্থির রয়েছে।
আদা ৮০-১২০ টাকা কেজি, রসুন ৮০-১০০ টাকা কেজি। আলুও ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্বস্তি রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমসহ বেশির ভাগ সবজিতেই। চলতি সপ্তাহে দেশি টমেটোর দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে চলতি সপ্তাহে মোট ১৮টি পণ্যের দামে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে আটটির, কমেছে ১০টির।
সান নিউজ/এসএ
Copyright © Sunnews24x7Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.