জাতীয়

বীমার আওতায় আসছে দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে বীমার আওতায় আসছেন দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক। ৩ থেকে ৫বছর মেয়াদি এই কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ার পর সব পোশাক কারখানায় এটি চালু হবে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিল। এ ব্যাপারে সরকারেরও ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গেছে, দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানায় বর্তমানে আনুমানিক ৪০ লাখ কর্মী নিয়োজিত আছেন। সম্প্রতি এই শিল্পখাতে শ্রমিকদের অধিকার ও মানবাধিকার সম্পর্কিত বেশকিছু বিষয়ে বেশ ভালো উন্নয়ন হয়েছে। যদিও এখনও এই খাতে আরও অনেক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় বড় শিল্প-কারখানা দুর্ঘটনা,যেমন ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা বা পেশাগত রোগের ঝুঁকি থেকে শ্রমিকরা পুরোপুরি সুরক্ষিত নন। এমনকি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৭ বছর পার হওয়ার পরও এখনও বাংলাদেশ সর্বাঙ্গীণ ইমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি ইনস্যুরেন্সের (ইআইআই) দিক থেকে পিছিয়ে আছে।

ফলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বৈশ্বিকভাবে অনুমোদিত আইএলও কনভেনশন ১২১ এর ইআইআই সুবিধাগুলো পাচ্ছে না, যা তাদের প্রাপ্য। এমনকি শীর্ষ ২০ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র যার শ্রমিকদের ইআইআই এবং কোন প্রকার সামাজিক বীমার সুবিধা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এসেছে, দেশের রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর এর অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৪৩ ভাগই বছরে নানা অসুখে ভোগেন।

কিন্তু মোট শ্রমিকদের মাত্র ১ ভাগ আছেন স্বাস্থ্য বীমার আওতায়। এছাড়া শতকরা ৪০ জন শ্রমিক উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধায় আছেন মাত্র ৩৫টি কারখানার ৫৮ হাজার ২৬১ জন শ্রমিক।

এ বিষয়ে ঢাবি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান সম্ভাবনাময় খাত। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের, বিশেষত নারীদের কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছরে শতকরা ৪৩ ভাগ শ্রমিক বিভিন্ন অসুখে ভুগে থাকেন। অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে গড়ে ৪ দিনের বেতন তাদের হারাতে হয়।

আইএলও ও সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনতে সরকারের সঙ্গে শিগগিরই একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে বীমা ব্যবস্থা থেকে তাদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করা।

ইআইআই নামে চালু হওয়া বীমার প্রাথমিক অর্থ ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছ থেকে আসবে। পুরোদমে চালুর পর এটির দায়িত্ব কারখানা মালিকদের নিতে হবে। আইএলও সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত বীমা সুবিধা কী এবং এটা করলে তার উপকারিতা নিয়ে ক্রেতা, মালিক, শ্রমিক ও সরকারসহ সব মহলের পরামর্শ বা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা, যা চলমান রয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শ্রমিকদের বীমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে ব্যয় হবে রফতানির ০.০১৯ শতাংশ বা প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় দুই পয়সা। আর দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা রফতানি মূল্যের ওপর ০.০৩ শতাংশ হারে সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিলে টাকা জমা দিচ্ছেন। দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ এবং কর্মহীন হওয়ার মতো আহত হলে আড়াই লাখ টাকা পান। বর্তমান বাস্তবতা ও আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ টাকা খুবই অপ্রতুল।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, প্রত্যেক শ্রমিকেরই স্বাস্থ্য বীমা থাকা জরুরি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বীমা সুবিধা কার্যকর করতে দাবি করে আসছি। বীমার অর্থায়নের ব্যাপারে কারখানা মালিকের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বায়ারদের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চ...

হেলিকপ্টার সংঘর্ষে নিহত ১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ান ন...

দেশবিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশবিরোধী একটি...

তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : তাপপ্রবাহ কমে...

স্বর্ণের দাম আরও কমলো

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসে ৩ দফ...

নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবদেক: ঢাকা দক্ষিণ সিট...

ট্রাক ও ট্রাক্টরের সংঘর্ষে নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলার বোদা...

হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: রাজবাড়ী জেলার গোয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা