আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতের অর্থনীতি। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে বেকার দরিদ্রদের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে দেশটির গণমাধ্যমে। এর মধ্যেই ৯৭১ কোটি রুপি খরচে নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে দেশটিতে চলছে নানা বিতর্ক।
সম্প্রতি মোদি সরকার নতুন সংসদ ভবন তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করতেই এ নিয়ে সমালোচনায় মাতে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, করোনার আঘাতে বিধ্বস্ত অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ কেন? নতুন সংসদ ভবনেরই বা দরকার কী?
এ নিয়ে বিরোধ গড়ায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। পরে দেশটির শীর্ষ আদালত ঘোষণা দেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে ভূমিপূজা করতে পারে। তবে নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ এখনই শুরু করা যাবে না।
তবে, আদালতের সেই আদেশ আর বিরোধীদের সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রথা মেনে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয় ভূমিপূজার অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশাপাশি এতে যোগ দেন ভারতের লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, উপ-রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার অধ্যক্ষ বেঙ্কাইয়া নাইডু।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ একাধিক মন্ত্রী এবং শাসকদলের জ্যেষ্ঠ নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পরে নিজ হাতে নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের বর্তমান সংসদ ভবনের অদূরে ৬৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে তৈরি হচ্ছে ত্রিভূজাকার নতুন ভবন। বর্তমান বৃত্তাকার সংসদ ভবনটি ভবিষ্যতে ‘পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন’ হিসেবে থেকে যাবে বলে জানিয়েছেন ওম বিড়লা।
নতুন সংসদ ভবন তৈরির দরপত্রে সর্বনিম্ন দর হাঁকিয়ে কাজ পেয়েছে টাটা গোষ্ঠী। ২০২২ সালের মধ্যে এই ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্য মোদি সরকারের। যদিও সেটা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ, আপাতত নির্মাণকাজের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের।
মহামারির মধ্যে বিপুল ব্যয়ে নতুন সংসদ ভবন তৈরি নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেও সরকার পক্ষের দাবি, এই প্রকল্পে অন্তত দুই হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। আগামীতে লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্য বাড়ার সম্ভাবনা এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির পক্ষেও যুক্তি দেখিয়েছে তারা।
ভারতের নির্মাণাধীন সংসদ ভবনের লোকসভায় একসঙ্গে ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভায় ৩৮৪ জন সদস্যের বসার ব্যবস্থা হচ্ছে। বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা ৫৪৩ ও উচ্চকক্ষের ২৪৫। তবে নতুন ভবনের সেন্ট্রাল হলে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ১ হাজার ২২৪ জন সদস্য অংশগ্রহণের উপযোগী ব্যবস্থা থাকবে।
নতুন সংসদ ভবনের ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হবে বিভিন্ন দপ্তর এবং আবাসন ভবন। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের বাসস্থানের ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন, আনন্দবাজার পত্রিকা
সান নিউজ/পিডিকে/এস