মতামত

বিজ্ঞানশিক্ষার ফল আসছে না! 

শাহেদ জাফর হোসেন

অনেককেই বলতে শোনা যায় দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা হচ্ছে না, ছাত্র ছাত্রী কমে যাচ্ছে! বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবে কুসংস্কার আর উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে।

কিন্তু আসলেই কী তাই? বিজ্ঞান শিক্ষা যথেষ্ট পরিমাণেই হচ্ছে! তবে বিজ্ঞান শিক্ষার ফল আসছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।

দেশে শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে সাত/আটটি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে চার/পাঁচটি, দশ বারোটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ান হয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিজ্ঞানের সাবজেক্ট আছে , সরকারি বেসরকারি মিলে দেশে মেডিকেল কলেজ আছে শ'খানেক। আর পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের কথা বাদই দিলাম।

এখন কথা হলো এত এত প্রতিষ্ঠান আর ছাত্র ছাত্রী থাকা সত্বেও আমরা কেন বলছি বিজ্ঞান শিক্ষায় আমরা পিছিয়ে। এর অন্যতম ও প্রধান কারণ হলো একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করতে যায় খোলা বা সাদাকাগজের মতো মন নিয়ে নয়। তার মনে আগে থেকেই অনেককিছু লেখা থাকে, অনেক বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে।

পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শতকরা ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে এমনভাবে জড়িয়ে রাখে যে সে বইয়ে যা পড়ে তা শুধু পড়ার জন্যই পড়ে তা মানা বা বিশ্বাসের জন্য পড়ে না।

এক্ষেত্রে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের কথাটি মনে পড়ে গেল। তিনি যেমন বলেছিলেন, ছাত্রদের এত করে পড়ালাম পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে পড়লে চন্দ্রগ্রহণ হয়। তারা পড়ল, লিখল, নম্বর পেল, পরীক্ষায় পাশও করল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যখন সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হলো তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করেছে বলে তারা ঢোল, করতাল, শঙ্খ নিয়ে রাস্তায় বাহির হয়ে পড়ল।

এজন্যই একজন পদার্থ বিজ্ঞানে পড়া মানুষ মহাবিশ্বের বিগ ব্যাঙ থিউরি নিয়ে হাসাহাসি করে। মেডিকেল বা জীব বিজ্ঞানে পড়া মানুষ বিবর্তনকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়। নৃ-বিজ্ঞানে পড়া মানুষ তিন লক্ষ বছর আগেকার মানুষের অস্তিত্ব কল্পনাতেও আনতে পারে না।

পড়তে হয় বলেই হয়তো পড়া, এছাড়া এর বেশি কিছু নয়। পাশ করতে হবে তাই পড়তে হবে। কিংবা ব্রিটিশরা কর্মব্যবস্থার যে টোপ ঝুলিয়ে গেছে মাথার উপর তা পড়ালেখা ছাড়া ধরা যাবে না তাই পড়তে হবে।

সেদিক থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্য উচ্চ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশেরই আকাঙ্ক্ষা। যদি এমন নিয়ম চালু থাকত দেশে যে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সিভিল সার্ভিস সহ সকল প্রথম সারির চাকুরি করা যাবে।

তাহলে খুব অল্প পরিমাণ বা হাতেগোনা কয়েকজন শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতো।

আর একটি দিক হলো সামাজিক মর্যাদা। অমুকের ছেলে ডাক্তার তাই আমার ছেলেকে ব্যারিস্টার হতে হবে। তমুকের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার তাই আমার মেয়েকে পাইলট হতে হবে। শিক্ষা শেষ পর্যন্ত সবার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতাই হয়ে থাকল।

মানুষজন গুগল বা মাইক্রোসফটে চাকরি করাটাকে সম্মানজনক মনে করে কিন্তু দেশে গুগল বা মাইক্রোসফট এর মতো একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করার কথা ভাবে না!

এখন বা অদূর ভবিষ্যতে সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞানমুখী করলেও কোনো ফল আসবে বলে মনে হয় না। গাছে ফল আসার আগেই আমরা গাছটাকে যদি কেটে রাখি অধিক লাভের আশায় তাহলে গাছ এবং ফল কোনটাই পাওয়া যাবে না।

আর সেই পাওয়াটা যদি একাল বা অন্য কালের আশায় হয় তাহলে তো শেষমেশ কিছুই থাকে না !

লেখক—শাহেদ জাফর হোসেন

সান নিউজ/এম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশের মৃত্যু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইন...

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

জেলা প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলার হ...

যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি যেকোনো উ...

মাটি খোঁড়ার সময় উদ্ধার মাইন-মর্টারশেল

জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীতে পুকুর খননের সময় উদ্ধার দুইটি মাই...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা