আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মীদের হয়রান ও দমনপীড়ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২০ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন সরকার মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হয়রানি ও দমনপীড়ন চালিয়েছে। যারাই সরকারি কর্মকর্তা ও নীতির সমালোচনা করেছেন, তাদেরকেই হয়রানি করা হয়েছে।

ভিন্নমতের মানুষদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের গলা টিপে ধরতে কর্তৃপক্ষ কুখ্যাত রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করেছে। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ ও সংগঠনকে যারা সরকারের কর্মকান্ড ও নীতির সমালোচনা করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে।

২০২০ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ৭৬১ পৃষ্ঠার বিশাল এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে শতাধিক দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি গত বছর কেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচে ছিল তা আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়। এর পাকিস্তান অংশে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে অব্যাহতভাবে সহিংসতা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা।

তাদের সুরক্ষা দিতে অথবা নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। নির্যাতন ও বিচার বহিভূত হত্যাকান্ডের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন করে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের হামলা নিহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রের সাবেক প্রধান এবং বেশ কিছু সাবেক মন্ত্রীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বেশ কিছু নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি নিরাপত্তা বিষয়ক বাহিনী এবং জঙ্গি গ্রুপগুলোর নির্যাতনমূলক খবরে মিডিয়া কাভারেজ দেয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়ায় এক ভীতির পরিবেশ বিরাজমান। অনেক সাংবাদিকদের ওপর হুমকি রয়েছে। অনেকের ওপর হামলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তারা নিজেরাই খবর ক্রমবর্ধমান হারে সেন্সর করছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা বিচার বিভাগের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মিডিয়ার ওপর রয়েছে কড়া চাপ।

২০২০ সালে যেসব টেলিভিশন ও ক্যাবল অপারেটর সমালোচনামূলক প্রোগ্রাম প্রচার করেছিল তাদেরকে ব্লক করে দেয় সরকারের নিয়ন্ত্রক এজেন্সি। সেপ্টেম্বরে ইলেক্ট্রনিক ক্রাইমস এ্যাক্ট লঙ্ঘন করার দায়ে কমপক্ষে ১২ জন সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি বা পোস্ট দেয়ার কারণেও সাংবাদিকরা অভিযোগের মুখে পড়েছেন।

১১ই সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের বার্তা সম্পাদক বিলাল ফারুকিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। জামিনে মুক্তি দেয়ার আগে বেশ কয়েক ঘন্টা তাকে আটকে রাখা হয় করাচিতে। ৯ই সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের ঝিলমে একজন সিনিয়র সাংবাদিক আবসার আলমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ গঠন করা হয়। বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন।

১৫ই সেপ্টেম্বর সামা টিভির রাওয়ালপিন্ডির একজন সাংবাদিক আসাদ আলী টুর-এর বিরুদ্ধে টুইটারে মন্তব্য করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। সমালোচকদের কণ্ঠ রোধে তাদেরকে টার্গেট করতে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল একাউন্টেবলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) অব্যাহতভাবে ব্যবহার করেছে সরকার। ১২ই মার্চ জাং গ্রুপের প্রধান সম্পাদক মীর শাকিলুর রেহমানকে লাহোরে গ্রেফতার করে এনএবির এজেন্টরা।

৩৪ বছরের পুরনো একটি সম্পত্তি হস্তান্তরে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকে তিনি আটকই রয়েছেন। জুলাইয়ে, অবৈধভাবে খবর ও বর্তমান বিষয়বস্তু প্রচার করার অভিযোগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল ২৪নিউজএইচডি অনির্দিষ্টালের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি (পারমা)। সরকারের সমালোচনা করার কারণে এর শাস্তি হিসেবে এমনটা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাংবাদিকরা ও বিরোধী অধিকারকর্মীরা।

২১শে জুলাই রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে দিনের বেলা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায় সাংবাদিক মতিউল্লাহ জানকে। পরে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অবমাননাকর/মানহানিকর এবং আপত্তিকর ভাষা ব্যবহারের অভিযোগে তাকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়। কয়েক ঘন্টা পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি দাবি করেন, ভয় দেখানোর জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।

নারী সাংবাদিকদের হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আক্রমণ চালানো হয়। এর বিরুদ্ধে আগস্টে শীর্ষ স্থানীয় নারী সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, যেসব সাংবাদিক সরকারের সমালোচনা করছেন, তারাই এই হুমকিতে রয়েছেন। বেসরকারি সংগঠনগুলো ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি ও নজরদারির অভিযোগ এনেছে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

জাহাজ উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য ক...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

নিগৃহীত নেতাদের তালিকা দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আ’লীগের স...

গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার কাপ...

মাংসের বাজারে মিলছে না স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার শুরু থেকেই গরু, মুরগি, খাসিসহ সব ধরন...

কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত ৮

জেলা প্রতিনিধি: নাটোর জেলার লালপু...

লরি-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষ, নিহত ১

জেলা প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে লরি ও কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা