সারাদেশ

পাঁচ ঠিকাদারের কব্জায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো: পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কব্জায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত ১৪ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান সংঘবদ্ধভাবে সুকৌশলে একের পর এক হাতিয়ে নিচ্ছে কাস্টম হাউসের নিলামযোগ্য পণ্যের কোটি কোটি টাকার দরপত্র।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- এসই এন্টারপ্রাইজ, নুরুল আবছার এন্ড কোং, এসকে মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মো. আবুল কালাম ও ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ।

অভিযোগ উঠেছে, ১৪ বছর আগে প্রদত্ত একটি অফিস আদেশের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রতিবারই নিলামযোগ্য পণ্যের কোটি কোটি টাকার দরপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অফিস আদেশে উল্লেখ রয়েছে, নিলামের আগে পণ্যের বাজারদর যাচাই-বাছাই করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এরপর কাস্টমস ডিউটি ও পোর্ট চার্জ যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট পণ্যের প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করতে হবে। কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে প্রাক্কলিত দরের ৬০ শতাংশ দর পেলে তা বিবেচনায় আনতে হবে। অন্যথায় দ্বিতীয় দফা নিলাম আহ্বান করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি দর পেলে নিলামে ওঠা পণ্য বিক্রি করা যাবে। অন্যথায় আহ্বান করতে হবে তৃতীয় দফা টেন্ডার বা দরপত্র। সর্বশেষ দরপত্রে দাম যা উঠবে তাতেই পণ্য দিতে বাধ্য থাকবে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।

আইনের এ ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে তৃতীয়বার টেন্ডার ডেকে ইচ্ছামতো দামে পণ্য বাগিয়ে নিচ্ছে নিলাম থেকে। আইনে কিংবা আদেশে নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির ঠিকানাও যাচাই-বাছাই করে দেখার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আর এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বার বার একই প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা নিচ্ছে ক্রমান্বয়ে। শুধু তাই নয়, নিলামে অংশ নেয়া কিছু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক বন্দর-কাস্টমসেরই কর্মকর্তার আত্নীয়স্বজন ও প্রিয়মুখ হওয়ায় নাম গোপন করেই নিলামে অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ঠিকানা গোপন রাখার সুবাধে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।

মূলত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ছত্র-ছায়ায় কাগজে-কলমে ১০ থেকে ১৫টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চক্রই দরপত্র বিজয়ী হচ্ছে! গত ১৪ বছর ধরে এভাবে অনিয়ম চললেও নিলাম প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ঘুরে ফিরে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান নিলামে কেন সর্বোচ্চ দরদাতা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা হয়নি। এমনকি নিলামে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও কখনও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। অথচ নিলামে অংশ নিতে জমা দেওয়া ১০ শতাংশ জামানতের পে-অর্ডারেও তারা ব্যবহার করছে ভুয়া নাম-ঠিকানা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের নিলাম ঘিরে সক্রিয় রয়েছে বেশ কটি সিন্ডিকেট। দর নিয়ে এসব সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যথাসময়ে অনেক নিলামই স¤পন্ন করা যায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমাতে কাস্টমসের পক্ষ থেকে নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কারণে নিলামের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়।

তিনি বলেন, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কারা নিলাম থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য খালাস করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে কাস্টমস হাউস থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও চেয়েছে এনবিআর। এতে কাস্টমসে অনিয়ম দুর্নীতি অনেকটা কমে যাবে। কাস্টমসের কার্যক্রম আরো তরান্বিত হবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এলে পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং করে দেশ থেকে মুদ্রাপাচার রোধ করা যাবে। এর পাশাপাশি আগামিতে ই-পেমেন্ট পদ্ধতির চালু করা হবে শতভাগ।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম) ফয়সাল বিল রহমান বলেন, অনলাইনে নিলাম পরিচালনা করতে গিয়ে প্রথম দিকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লেও, সময়ের সাথে দুর্বলতা কেটে শতভাগ ই-অকশন আমরা বাস্তবায়ন করেছি। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই অনলাইনে নিলাম করার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীকে কাস্টমস হাউসে আসতে হবে না। বাসায় কিংবা অফিস যেকোনো জায়গায় বসেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রেরণ করে নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ই-অকশন পদ্ধতিতে নিলামে কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। কোন সিন্ডিকেট বা চক্র আছে কী না আমাদের জানা নেই। যে প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হবে তাকে বিজয় ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসই এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা ছোটন বড়ুয়া সান নিউজকে বলেন, কাস্টম হাউসের নিলামে নিয়মিত আমরা অংশগ্রহণ করার জন্য কোটেশন জমা দিয়ে থাকি। র্দীঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান বাজার যাচাই বাচাই ও বিশ্লেষণ করে থাকি। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কত টাকার দরপত্র দিলে ব্যবসায় লাভবান হবো সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে এই নিলামে অংশগ্রহণ করছি।

তিনি আরও বলেন, কাস্টমস নিলাম প্রক্রিয়া বিজয়ী হওয়ার পর বন্দর থেকে নিলাম সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলো গ্রহণ করতে গেলে মোট দরপত্রের ২০ শতাংশ বন্দর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ দিতে হয়। এসব পণ্যগুলো খালাস করতে দু তিন মাস লেগে যায় এর মধ্যে অনেক পণ্যের তরতাজা ভাবটিও চলে যায়। এছাড়াও নিলামে পণ্যগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাজারজাতকরণ করতেও খরচ গুণতে হয়। তাই নতুন বিডার এই প্রতিযোগিতা এসে ঠিকে থাকতে পারে না।

উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে আমদানিকারককে নোটিশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণা এক পণ্যের পরিবর্ততে অন্য পণ্য কিংবা ঘোষণার বেশি আনা জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বর্তমানে নিলামযোগ্য এমন তিন হাজার কন্টেইনার রয়েছে। এরমধ্যে ৬০টি লট সম্প্রতি নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাস চাপায় চুয়েট...

রাজধানীতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাঁখা...

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে না ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবহাওয়া অধিদপ্...

আবারও কমলো স্বর্ণের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসে তিন...

রংপুরে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

রংপুর প্রতিনিধি : সারাদেশের মতো র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা