সারাদেশ

নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করেই বাঁশখালীতে হত্যাকাণ্ড!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় এস এস পাওয়ার প্লান্টে পুুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটে তা মুলত নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার ইফতারের পর এই ঘটনার উৎপত্তি।

শ্রমিকরা জানান, শুক্রবার ইফতারের পর এক শ্রমিকের সময় নিয়ে নামাজ পড়াকে কাজে ফাঁকি উল্লেখ করে নির্যাতন চালায় চীনের কর্মকর্তারা। ওই সময় তার জায়নামাজ কেড়ে নিয়ে তাকে লাথি মারা হয় বলে দাবি বাঙালি শ্রমিকদের। বিষয়টি নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্দ হন শ্রমিকরা।

এ নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এমনকি রাতের শিফট ও দিনের শিফটের শ্রমিক মিলে শ্রমিকরা চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এতে শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। একপর্যায়ে শ্রমিকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ৫ জন শ্রমিক নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় অর্ধশতাধিক শ্রমিক।

তবে শ্রমিকদের মতে গুলিতে অন্তত ১২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। পুলিশ ও এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা মিলে অনেকের লাশ গুম করেছে। আহত হয়েছে শত শত শ্রমিক। যারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

এ ঘটনায় নিজেদের আত্নরক্ষার পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের জীবন রক্ষায় গুলি চালানো হয়েছে বলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমন তথ্য দেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, নামাজ পড়া নয়, বেতন ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শ্রমিকদের সাথে বৈঠকও হয়। এরপরও তারা কর্মবিরতি পালন করে। সেখান থেকে ঘটনার উৎপত্তি। নামাজের সময় না দেওয়ার বিষয়টিকে গুজব আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানও বলেন, এটি স¤পূর্ণ গুজব। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইর থেকে ইন্ধন পেয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মামলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে সব বের হবে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জেলা প্রশাসনের প্রক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা কল-কারখানা পরিদর্শকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন ডিসি মমিনুর রহমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলমের হেড অব এসেস্ট মোস্তান বিল্লাহ আদিল বলেন, কো¤পানির পক্ষে কোনো বেতন-ভাতা বকেয়া নেই। শ্রমিকদের বড় একটা অংশ সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে। তাদের ঠিকাদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পারিশ্রমিক পরিশোধে গড়িমসি করে। মার্চ মাসের বেতন কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি। প্রতিমাসের ১০ তারিখ কো¤পানির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বেতন বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে শুক্রবার মিটিং হয়েছে। তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত শনিবার সকালে চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেল। এই ঘটনায় বাইর থেকে কেউ উস্কানি দিয়েছে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশের উন্নয়ন যারা চায় না, তারাই এই ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেনে নেওয়ার পরও এমন ঘটনা রহস্যজনক। প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে এই ঘটনার পিছনে কারা আছে।

উল্লেখ্য, বাঁশখালীর গন্ডামারায় ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৭০ ভাগ মালিকানা দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ এস আলমের, বাকি ৩০ ভাগ চীনা কো¤পানি শাংডং ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সেপকো-থ্রি)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুরুতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রথম দফা হত্যাকান্ডের ঘটনাা ঘটে। এই হত্যাকান্ডের মূলে থাকা এস আলম গ্রুপের কারো বিচার হয়নি এখনো। উল্টো হত্যাকান্ডের শিকার জমির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা ও পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষতির অভিযোগে মামলা হয়েছে একাধিক। যেগুলো একের পর এক হয়রানির শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।

আর ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করাসহ নানাভাবে শ্রমিক নির্যাতন নিয়ে বিক্ষুব্দ শ্রমিকদের উপর দ্বিতীয়বারের মতো গুলি চালিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের মো. আবু ছিদ্দিকের ছেলে আহমদ রেজা মীরহান (১৮), অলি উল্লাহর ছেলে রনি হোসেন (২২), নুরুজ্জামানের ছেলে শুভ (২৪), দানু মিয়ার ছেলে মো. রাহাত (২২) ও নোয়াখালীর রায়হান (২৬)। এ ঘটনায়ও শ্রমিকদেও বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ ঘটনায় আর যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের পরিবারকে সংশ্লিষ্ট কো¤পানি তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের প্রতি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সান নিউজ/বিএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

লক্ষ্মীপুরে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

স্বাধীনতা দিবস ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু 

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল শিশুর

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সেনবাগে পানিতে ডুবে এক শিশুর...

ভারতের পণ্য বর্জনে সরকার এত বিচলিত কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

দেশে বছরে অকাল মৃত্যু পৌনে ৩ লাখ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূষণের কারণে বা...

বাগদান সারলেন অদিতি-সিদ্ধার্থ

বিনোদন ডেস্ক: ভারতের জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী অদিতি রাও হায়দা...

আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের চেয়ে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা