বাণিজ্য

ধান উৎপাদনের ভরা মৌসুমে অস্থির চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বেধে দেয়া দামের তোয়াক্কা না করে চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা। কোনও কারণ ছাড়াই বৃদ্ধি করা হচ্ছে চালের দাম। সরু ও মাঝারি চালের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে পাইকারি পর্যায়ে চালের তীব্র সংকট তৈরি করা হচ্ছে।

এতে ধান উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও বাজারে আবারও চালের দাম বস্তাপ্রতি দেড়শ থেকে দু’শো টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এমনকি নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে চাল দিতেও মিল মালিকরা আপত্তি করছেন। তারা কেজি প্রতি ৪ টাকা করে বেশি দাবী করছেন।

সূত্র জানায়, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মাঝারি ও সরু চালের দাম বেঁধে দেয় সরকার। নতুন দামে সরু মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৫১ টাকা ৫০ পয়সা আর মাঝারি মানের চাল কেজি প্রতি ৪৫ টাকা করে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়।

অথচ দুই মাস পার হতে চললেও নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি করছেন না মিল মালিকরা। বরং মিল পর্যায় থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এমনকি সরু ও মাঝারি চাল ঢাকায় পাঠানো প্রায় বন্ধ রেখেছেন মিল মালিকরা। এতে রাজধানীর পাইকারি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার ধান-চাল কেনায় দাম বাড়তির দিকে।

তবে অধিকাংশ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, চালের বাজারে ভয়াবহ রকমের সিন্ডিকেট চলছে। তারা বরাবরের মতো মিল মালিকদের দায়ী করছেন। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম আরও বাড়ছে। দাম বাড়াতেই তারা নতুন করে অর্ডার নিচ্ছে না। চাল নিয়ে বরাবরই সিন্ডিকেট করে যাচ্ছেন তারা।

সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা তাতে কর্ণপাত করছেন না। এই সিন্ডিকেট বন্ধ না হলে চালের বাজারে অস্থিরতাও বন্ধ হবে না। তাই সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি বিশ্লেষকদের। রাজধানীর কাওরান বাজারের এক পাইকারি চাল ব্যবসায়ি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। আরও বাড়তে পারে।

দেশে বন্যায় অনেক ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তাই চালের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া মিল মালিকদের মধ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়ান। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে বরং ৪-৫ টাকা বাড়তি রাখছেন। এ অবস্থায় যদি বাইরে থেকে আমদানি না হয় তাহলে মিনিকেট চিকন চালের দাম বাড়তেই থাকবে।

তিনি বলেন, মিনিকেট ও আটাশ চাল প্রতি কেজিতে প্রায় ৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিলাররা বলছেন, তারা ধান পাচ্ছেন না, তাই অর্ডার নিচ্ছেন না। তবে এটা সবাই জানে মিলারদের মধ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে। কিছু অসাধু মিল মালিকরা পুরো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এমনিতেই দেশে এবার বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে।

অন্যদিকে, সরকার বোরো মৌসুমের পর আমন ধান-চাল সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বিবেচনা করে ধান-চালের সংগ্রহে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নির্ধারিত মূল্যে সরকারকে চাল দিতে আপত্তি মিল মালিকদের। তারা কেজি প্রতি ৪ টাকা করে বেশি দাবি করছেন। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয়েছে। চালের যেন সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্য চাল আমদানি করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই খাদ্য অধিদফতর ১ লাখ টন চাল আমদানির দুটি দরপত্র আহ্বান করেছে। প্রয়োজনে আরও আমদানির কথা রয়েছে বলে সূত্র জানায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দামে ২ লাখ টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দামে ৬ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দামে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু চালকলের মালিকেরা চান, সরকার সেদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা নির্ধারণ করুক।

সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চালকল মালিকরা বৈঠকেও মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর দাবি তোলেন। তবে দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, গত বুধবার বগুড়ায় চালকল মালিকরা কেন্দ্রীয়ভাবে আরেকটি বৈঠক করেন। বৈঠকে মালিকরা নির্ধারিত মূল্যে সরকারকে চাল না দেয়ার পক্ষে মত দেন। এদিকে সরকারি চালের মজুতও কমতির দিকে বলে জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২ মাসের মধ্যে চালের মজুত ১০ লাখ টন থেকে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টনে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় চালের সংকট নিরসনে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চাল আমদানি করা হলে দাম কমবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ভারত থেকে আমদানি করলে দেশে আসার পর শুল্কসহ প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৩৪ টাকা। আর থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করলে দাম পড়বে কেজি প্রতি ৪৫ টাকা।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চাল নিয়ে মিল মালিকদের মধ্যে সিন্ডিকেট বা তাদের কারসাজিতে চালের দাম বৃদ্ধি পায় এটা অনেকেরই ধারণা। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। আমার মনে আছে এর আগে খাদ্যমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিলেন।

ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, মিল মালিকরা নির্ধারিত মূল্যে সরকারকেও চাল দিতে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা আরও বেশি দাম চাচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার যদি চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় এবং এতে যদি পণ্যটির দাম কমে, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি যথার্থ। সরকার যদি তাদের দাবি না মেনে চাল আমদানি করে, এতে তাদের সিন্ডিকেট কিছুটা হলেও দুর্বল হবে। পাশাপাশি নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চাল সরবরাহের ব্যাপারে মিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচন সম্পন্ন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুর জেলার সদর ইউনিয়...

শরীয়তপুরে ৩ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের ভে...

লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নজর রাখার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্...

সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আব...

ভারতে ৭ দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু কাল 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগামীকাল থেকে...

রাজধানীর আবাসিক ভবনে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছ...

ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২১ এপ্রিল...

লক্ষ্মীপুরে জনগণের দ্বার প্রান্তে সৈয়দ আবুল কাশেম

সোলাইমান ইসলাম নিশান : লক্ষ্মীপুর...

পরিবেশের ক্ষতির সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা