বাণিজ্য

চাল-তেলের দাম নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীর রশি টানাটানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চাল খুচরায় কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছিল ৩২-৩৫ টাকায়। একই সময়ে মিনিকেট চালের কেজি ছিল ৫২-৫৩ টাকা। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টনেরও বেশি বোরো ও আউশ ধান ঘরে তুলেছে কৃষক।

তারপর আমন ধানের মৌসুমে এবার ১ কোটি ৫৬ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বন্যার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত মৌসুমের চেয়ে অন্তত ১২ লাখ টন বেশি আমন চাল উৎপাদিত হবে।

ইতিমধ্যে আমনের নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করলেও ৯ মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১৫-১৬ টাকা। তবে অবাক করার বিষয় হলো বাজারে চালের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কিছুই জানেনা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো।

সোমবার ( ১৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেলের দামও বর্তমানে রেকর্ড ১২০ টাকা লিটার দামে বিক্রি হচ্ছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ১০৫-১১০ টাকা।

চালের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান, ‘আমরা যদি এক বছরের হিসাব ধরি, তাহলে বলতে পারি মোটা চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ টিসিবি ও কৃষি বিপণন অধিদফতর সেভাবে দাম বাড়ার কথা স্বীকার করছে না। এরপরও আমরা নিজ উদ্যোগে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছি।

খাদ্য সচিবের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে কৃষি বিপণন অধিদফতরের ওয়েবসাইট খোঁজে দেখা যায়, কেজি প্রতি চিকন আমন চাল ৫৬-৫৯ টাকা, মাঝারি আমন চাল ৪৭-৪৯ টাকা, মোটা আমন চাল ৪২-৪৩ টাকা, চিকন বোরো চাল (মিনিকেট ও নাজির) ৫৬-৫৮ টাকা, মাঝারি বোরো চাল ৪৯-৫২ টাকা ও মোটা বোরো চাল ৪৩-৪৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

আর টিসিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একই দিনে মিনিকেট চাল ৫৬-৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫০-৫৪ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৪৮ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র, চাল খুচরায় মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দামে। এ ছাড়া মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৭- ৫৮ টাকা এবং মোটা চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা দামে। আর একেবারে নিম্নমানের মোটা চালের কেজি ছিল ৪৮ টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যের সঙ্গে বাজারের প্রকৃত মুল্যের পার্থক্য বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দেওয়ান আশরাফুল হোসাইন জানান,‘আমরা তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চালের দাম নির্ধারণ করি। অথচ বাজারে নানা জাতের চাল আছে। সেগুলোর গড় দাম নির্ধারণ করার কারণেই বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না।

অন্যদিকে, সরকারের আরেক বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য হালনাগাদকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত বাবুবাজারে ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে পাইকারিতে দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা পর্যন্ত। আমন মৌসুম চললেও মোটা চালে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ২ টাকা। একই বাজারে মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দামে।

আর একই পরিমাণ বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া স্বর্ণা (মোটা) চালের বস্তাও (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবু কাওসার বলেন,‘মিলমালিকরা একসঙ্গে সবাই মিলে ১০-১২ দিন আগে চালের দাম বাড়িয়েছে।

এছাড়া সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ওপরও নির্ভর করে কখনই সমন্বিত কোনও অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। এজন্য বাজারে ক্রেতাদেরও মিলে না স্বস্তি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমানারা খানুম বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে যে চাল উৎপাদন হয়েছে তা থেকে অন্তত ৩০ লাখ টন উদ্বৃত আছে।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে। তবে দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারন নেই বলেই আমি মনে করি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বাজার মনিটরিং টিম রয়েছে এবং তারা অভিযানও পরিচালনা করে। ভোক্তা অধিকারের একজন প্রতিনিধি সেখানে থাকে।

সয়াবিনের দাম নিয়ে এ সপ্তাহেই বৈঠক হবে। আমদানি করা সয়াবিন তেলে আগে এক স্তরে ভ্যাট দিতে হতো। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করে সরকার। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম ওঠানামা করে। বিষয়টি সুরাহায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্যারিফ কমিশনের পরামর্শক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বিবেচনার জন্য চিঠি দেয়। এরপর আট মাস কেটে গেলেও অর্থ মন্ত্রণালয় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকরা। বর্তমানে লিটার প্রতি খুচরায় ১১৮-১২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা করার জন্য নভেম্বরের শেষের দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে সমিতি। বিষয়টি পর্যালোচনা করতে ট্যারিফ কমিশনকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘কীভাবে দাম কমানো যায় সেটি নিয়ে কাজ চলছে।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে তেলের দাম বাড়া কমার বিষয়। দুদিন পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। তবে যতটুকু জানি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা বাড়তি। ভ্যাট পুনর্বিবেচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠি দিয়েছি। বাকিটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলতে পারবে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাস চাপায় চুয়েট...

রাজধানীতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাঁখা...

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে না ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবহাওয়া অধিদপ্...

আবারও কমলো স্বর্ণের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসে তিন...

রংপুরে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

রংপুর প্রতিনিধি : সারাদেশের মতো র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা