সারাদেশ

গাংনীতে ৩০ ইটভাটা গিলে খাচ্ছে আবাদি জমি

নিজস্ব প্রতিনিধি, মেহেরপুর : মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর এ সকল ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানী কাঠ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে । ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই ।

অপরদিকে ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদী জমির টপসোয়েল। ফলে নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি। প্রশাসনের তেমন কোন ভুমিকা বা নজরদারি না থাকায় একের পর এক বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। পরিবেশ অধিদফতর ১০টি ভাটায় জরিমানা করলেও বহাল তবিয়তে চলছে আরও ৩০ টি ইটভাটা।

গাংনী উপজেলায় ৪০ ইটভাটা রয়েছে। যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরি হওয়ায় আবাদী জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে ইট তৈরি করে।

এতে ফসলী জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও আবাদি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কোন ইটভাটায় অনুমতিপত্রের শর্তনুযায়ী এক টুকরা কয়লা ব্যবহার করা হয় না । ব্যবহার করা হয় কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।

ভাটা স্থাপন এলাকার আশপাশের অনেক কৃষকের ফসল নষ্ট হলেও কিছুই বলতে পারছেনা ভাটা মালিকদের। ভাটা মালিকরা সমিতি করে একতা বদ্ধ হয়েছেন তাই ভয় পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও এলাকাবাসী।

ইটপোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭ নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরি করা যাবেনা ও ১২০ ফুট চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবেনা। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেনা।

ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরি করছে। নিয়ম না মেনে ইটভাটা নির্মাণ করার ফলে পরিবেশ অধিদফতর মাস খানেক আগে ১০ টি ভাটায় জরিমানা করেছেন। অধিদফতরের অভিযান অব্যাহত রাখার কথা থাকলেও পরে আর খোঁজ মেলেনি সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গাংনী উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের মধ্যে একটি ইটভাটা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় ইয়ারুল ইসলাম ও নাজমুল হক,হিজলবাড়িয়া গ্রামের মাধ্যে ভাটা স্থাপন করেছেন এনামুল হক ও মিলন মিয়া,হাড়াভাঙ্গা এলাকায় রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে একটি নতুন ইট ভাটা,বাবুরপাড়ায় গ্রামের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করেছেন আলতাফ হোসেন।

তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে অনেক কস্ট সহ্য করেই বসবাস করছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ ওইসব ভাটায় মাটি সরবরাহ করতে যেখঅনে সেখানে কাটা হচ্ছে মাটি। মাটি বহন করে ভাটায় নিতে একদিকে যেমন আবাদি জমি সঙ্কুচিত হচ্ছে অন্য দিকে রাস্তার বেহাল অবস্থায় পরিনত হচ্ছে। যেন দেখার বা বলার কেউ নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষি জমি। কোথাও কোথাও শুধু জমির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে। ট্রলি করে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। অতিরিক্ত মাটি বহনের ফলে বিভিন্ন রাস্তা দেবে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অনেক রাস্তা। তাছাড়া ধুলো বালি ও ইটভাটার কুন্ডলি পাকানো ধোঁয়ায় চলাচল দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রিয়াজুল আলম জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইড, সালফার-ডাই অক্সাইড, হাইড্রোকার্বনসহ নানারূপ বিপজ্জনক বিষাক্ত গ্যাস ছাড়াও ধুলা ও ভাসমান ছাইয়ের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে।

এতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং কার্বনের নানাবিধ যৌগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। বেড়ে চলে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা। বৃদ্ধি পায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি এবং ফুসফুসের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।

গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু জানান, উপজেলার কোন ইটভাটারই সনদ নেই তার পরও ইটের প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবসার খাতিরে ইটভাটা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে প্রশাসনকেও ম্যানেজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদফতর অভিযান চালায় ও জরিমানা করে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

তাছাড়া ইটভাটায় ফসলী জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে এবং তা পরিবহনের কারনে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, জমির টপসোয়েল ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে উৎপাদন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এখনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমির টপসোয়েল কাটা বন্ধ করার আহবানও জানান তিনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহ নেওয়াজ জানান, আবাদী জমির টপসোয়েল ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইতোমধ্যে সকল ইটভাটা মালিককে টপসোয়েল কাটা ও মাটি পরিবহনের ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরও কেই এ চিঠি অমান্য করলে আইনসানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সান নিউজ/আকতার/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ফিরোজ চৌধুরী 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: ২য় ধাপে...

জেলা প্রশাসকের গাড়ি ভাংচুর, যুবক আটক

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে প্রার্থী আশরাফুল 

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে গণসং...

দৌলতখানে ১৩ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল

দৌলতখান প্রতিনিধি: ভোলার দৌলতখান...

ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ জনের মনোনয়ন দাখিল

ভোলা প্রতিনিধি: ২য় ধাপের উপজেলা প...

চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ ৫ জুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষষ্ঠ উপজেলা পরি...

বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড)...

পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে পদ্মা...

রাজধানীতে হিট স্ট্রোকে পথচারীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাও...

আ’লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২৬ এপ্রিল রাজধানীতে শান্তি ও উন্নয়ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা