ফিচার

আইসিটি সেক্টরে কর্মসংস্থান বাড়ছে নারীদের

সান নিউজ ডেস্ক : রাফিজা আক্তার এইচএসসি পাশ করেছেন ২০১৮ সালে। এসএসসি এবং এইচএসসি দুটো পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। তার ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়ার। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তার পছন্দের বিষয়। সে হিসেবে রাফিজা তার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। ভর্তি পরীক্ষার আগে তার স্কুলের এক প্রিয় শিক্ষকের সাথে হঠাৎ করে দেখা হয়। কুশল বিনিময়ের পর স্যার জানতে চান কোন বিষয়ে তার আগ্রহ। তখন রাফিজা তার ইচ্ছের কথা জানালে তিনি তাকে তার আগ্রহকে সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি পরামর্শ দেন যদি তার (রাফিজার) ইচ্ছে হয় যেন কম্পিউটার সায়েন্সের বিষয়টিও মাথায় রাখে। কারন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়ালেখার মূল্য অনেক। আর এক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে।

স্যারের পরামর্শ খুব মনে ধরল রার্ফিজার। বিশেষ করে নারীরা পিছিয়ে আছে কথাটি শুণে তার আগ্রহ বেড়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিল যেকোন ভাবেই তাকে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স সাবজেক্টে ভর্তি হতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে ফশফন তার পড়ালেখা চালিয়ে গেল। এবং অবশেষে ভর্তি হল স্বপ্নের কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে।

ঊনচল্লিশ বছর বয়সী মিরপুর নিবাসী চম্পা বিশ্বাষের গল্পটি কিছুটা ভিন্ন। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করার পর চাকরী নেয় একটি এনজিওতে। দু’ বছর চাকরী করার পর বিয়ে হয় তার। বিয়ের পরও চাকরী করছিলেন চম্পা। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পর প্রথম সন্তান হলে কিছুটা সমস্যায় পড়ে যান। তারপরও চাকরী করছিল সে। এর দুই বছর পর আরো একটি সন্তান হয় তাদের। এরপর দুই বাচ্চাকে সামলানোর জন্য চাকরী ছেড়ে দেন । এখন বড়টি ক্লাস নাইনে। আর ছোটটি ক্লাস সেভেনে। তারা দু’জন স্কুলে চলে গেলে বাসায় আর তেমন কাজ থাকেনা চম্পার। সময়ই যেন কাটতে চায় না।

স্বামী বিপ্লবের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে এ নিয়ে আলোচনা করার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় সে (চম্পা) কম্পিউটারের উপর স্বল্প-মেয়াদী একটি কোর্স করবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করার জন্য। চার-মাস মেয়াদী কোর্স শেষে বাসায় বসেই আউটসোসিংয়ের কাজ শুরু করে চম্পা। শুরুর দিকে কাজ পেতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও ছয়-সাত মাস পর থেকে তার দম ফেলার সময় থাকেনা। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। শেষে সিদ্ধান্ত নেন বাইরে এ ধরনের কাজ জানেন এমন চারজন নারীকে নিয়োগ দিবেন। এভাবে বর্তমানে চম্পার অধীনে ১১ জন নারী আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতি মাসে চম্পার ৫০,০০০/- টাকা থেকে ৫৫,০০০/- থাকে তার।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এর তথ্য মতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ নব্বইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্স অথবা তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্তক বিষয় সমূহ নিয়ে পড়ছে প্রায় ২৫ শতাংশ মেয়ে। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে চালিত জরিপে এ তথ্য পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ ছাত্রীর মধ্যে পড়ালেখা শেষে ১৩ শতাংশ আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত হন। আর মাত্র এক শতাংশ নারী আইসিটি সংক্রান্ত কোন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিওএসএন) এর মতে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত আইসিপিসি ঢাকা রাউন্ডের প্রাথমিক বাছাই পর্বে ৯৭৯ টি টিমের মধ্যে মাত্র পাঁচটি টিম ছিল যেখানে নারী নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জরিপ শেষে (বিওএসএন) নারীদের উৎসাহী করতে বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক প্রচারনা চালায়। ফলপ্রসু ২০১৬ সালে দেখা যায় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ওই একই প্রতিযোগীতায় ১২৯ টি টিমে নারী অংশ নিয়েছে।

বিওএসএন সাধারন সম্পাদক মুনীর হাসান বলেন আমাদের লক্ষ্য ছিল মেয়েদের আরো বেশী করে আইসিটি সেক্টরের সাথে সংযুক্ত করা। এ লক্ষ্যে আমরা দু’টি প্রজেক্ট হাতে নিই–‘গার্লস ইন আইসিটি’, এবং ‘মিসিং ডটার’। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণীতে মেয়ের অংশগ্রহণের সংখ্যা বাড়ানো। আর এসব ক্ষেত্রগুলোতে তারা যেন তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে। কারন এসব সেক্টরে মেয়েদের অংশগ্রহণ আশানুরুপ নয়।

তিনি বলেন, বিওএসএন অনেক উদ্দীপনামূলক অনুষ্টান পরিচালনা করেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধুমাত্র ছাত্রীদের উৎসাহ দিতেই আমাদের এতসব প্রচারনা চালাতে হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্য মতে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১.২ মিলিয়ন চাকরী তৈরী হয়। আর এসব চাকরীর অধিকাংশই ছেলেদের দখলে থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট পরামর্শ দিয়েছেন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে চাকরীর ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বর্তমানের চেয়ে আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে।

পুরুষদের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহন যদি ৩৩.৭ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৮২ শতাংশ করা যায় তবে বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথও ১.৬ শতাংশ বেড়ে যাবে।

এদিকে বর্তমান সরকারও আইসিটি সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আইটি সেক্টরে দশ হাজারেরও বেশী দক্ষ নারী জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আর্থিক সহযোগীতায় পরিচালিত লিভার্জিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রোজেক্টের অধীনে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারী যাতে অংশগ্রহণ করে সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ডিভিশনের অধীনে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) উদ্যোগে পরিচালিত এই এলআইসিটি প্রোজেক্ট চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪,০০০ নারী ও পুরুষকে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষিত ১০,০০০ নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা এ রহমান বলেন, অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি নারীর কর্ম ক্ষেত্রের জন্য অনেক বেশী উপযোগী।

তিনি বলেন, যেসব নারীরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা এই সেক্টরে আসতে পারেন। এই সেক্টরে কাজের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা

ভোলা প্রতিনিধি: ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট ব...

সম্মিলনী বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুর জেলার সদর ইউনিয়...

বাংলাদেশ স্কাউট দিবস ২০২৪ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে অনুষ্...

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক : দেশে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। আর এই গরমে সবচেয়ে ব...

ভাসানচরে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যা...

শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা শিশু হাসপা...

বিটরুটের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিটরুট হচ্ছে এ...

গরম আরও বাড়ার আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ৪ জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্র...

শিশু হাসপাতালে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে অগ্নিকাণ্ডে...

বিমানবন্দরে বাসচাপায় নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ৩য় টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে রাই...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা