শিল্প ও সাহিত্য

তবুও, প্রেম (৪র্থ পর্ব)

সুলতানা আজীম:

কথা হলো না একদিন। হলো না চ্যাটও। একশো বছর কি কেটে গেলো না আমার?

‘এই তুমি ফোন ধরনা কেনো, কী হয়েছে তোমার? কী করেছি আমি? কেনো শাস্তি দিচ্ছো? খুন করতে চাচ্ছো আমাকে? কথা বলো। চুপ করে থাকবে না। কথা বলো।’ তার কন্ঠে প্রচন্ড ঝড়।

কী বলবো আমি? বলতে গেলেই ওর ক্ষুদ্ধ আচরণের অভিযোগ করতে হবে। জবাব চাইতে হবে। কী জবাব দেবে ও? নিজের পক্ষেই বলবে। যেমন বলে, প্রতিবার। অপরাধ যা তা আমারই। ওর কোন ভুল নেই। অন্যায় আচরণও নেই।

সাটডাউন করতে হবে এবার আমাকে। এরকম যুদ্ধও করতে হয় মানুষকে? এতো অচেনা যুদ্ধ? নিজের বিরুদ্ধে নিজের যুদ্ধ। পারছি না আর। অসুখী মানুষ তো আমি না। জীবনটি তো বেছে নিয়েছি নিজেই। গড়েছি, সাজিয়েছি জীবনকে, সম্পূর্ণ নিজের পছন্দে। আমার জীবনের রিমোট কনট্রল, সে তো আমারই হাতে। কোন কারণে কতোটুকু যাতনা, আর কতোটা আনন্দ আমি নেবো, না কী নেবো না, সে সিন্ধান্ত তো আমার। এভাবেই তো চলছিলো জীবন এতো দিন। নিজের সিন্ধান্তে, নিজের নিয়মে। কী হলো এখন? পালিয়ে যাবো জীবন থেকে? সে মানুষও আমি না। তাহলে?

এসাইনমেন্ট দেয়া হয় অফিস থেকে, মরোক্কোতে কাজ করার। ভালো হলো খুব। যদি স্থির করতে পারি নিজেকে এবার। আকাশের হাইওয়ে জীবনের পার্টনার আমার। অভ্যস্ত এই পথ। ঘুমিয়ে অতিক্রম করি আকাশ পথের প্রায় পুরো সময়, প্রতিবার। কী হলো এবার? ঘুম কী আসেনি সাথে? গেলো কোথায়? একজনই এসেছে সাথে। সে। সেই তরুণ। না কী যুবক? কোথায় হারাবো আমি? পালাবো কোথায়?

আচ্ছা ও এমন কেনো? ও কী স্যাডিষ্ট? ও কী প্রিয়জনকে আহত করে আনন্দ পায়? রাগিয়ে দিয়ে অন্যকে, সুখী হয় খুব? ভালোবাসে আমাকে। অনুভব করি। কিন্তু ওর ভালোবাসার চরিত্র কেমন, বুঝতে পারি না। মুড ঠিক থাকলে ভালোবাসে। ভালোবাসার শব্দ বাক্যগুলো বলে। বার বার বলে। লেখেও। মুড বদলে গেলে বোঝা যায় না, ওর আচরণের চেহারা। অবাক হবার মতো, অপরিচিত বাক্য বলে প্রচন্ড আহত করে আমাকে। যা ঘটে নি কখনো, যা সত্য নয় তাই বলে। হঠাৎ করেই রেগে যায় সে। তখন হারিয়ে ফেলি আমার প্রেম। ওকে চিনতে না পারলে, ভালোবাসি কী করে? আচ্ছা, ওর সাথে সর্ম্পক যাদের, অন্য সব মানুষদের সাথেও কী এরকম আচরণ করে সে? না কী শুধু আমার সাথেই? জানতে চাইলে বলবেনা। অনেক প্রশ্নের জবাব দেয় না। দেয় যদি দু একটি জবাব, তাও কুয়াশা ঢাকা অন্যমনষ্কতায়। তা দিয়ে কী বোঝা যায় কাউকে? না বুঝলে,খুব কঠিন নয় সে মানুষকে ভালোবাসা? তবুও, তবুও ভালোবাসি তাকে আমি। খুউব ভালোবাসি। কেনো? কোন জবাব কী আছে এর?

‘নাদোর’ এয়ারর্পোটে পেরিয়ে হোটেলে রুমে আমি। আগে তো এমন হয় নি কখনো। কতো কতো দেশেই তো গেছি কাজের জন্যে। হলিডে উপভোগ করতে গেলেও, সে দেশগুলোর মাটি ও মানুষের সাথে মিশেছি। বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে মিশে, বেড়িয়ে, দেশটির সব ধরণের অবস্থা অনুভব করতে চেয়েছি। জানতে চেয়েছি, যা কিছুতে আগ্রহ আমার সঠিক অভিজ্ঞতায়। কতো কতো কতো অভিজ্ঞতা আমার জীবনে।

উৎসাহ পাচ্ছি না কেনো এখন? খুব অচেনা বিষন্নতা জোর করে জড়িয়ে রেখেছে আমাকে। আচ্ছা, ও যদি আসতো আমার সাথে এখানে? যদি আমি নিয়ে আসতাম তাকে, একই আচরণ কী করতো আমার সাথে? জানবো কেমন করে?

এই মরোক্কো, অন্য ধরণের একটি দেশ। পরিবেশ নির্ভর করে তৈরী করা বাড়ীগুলোও খুব অন্য রকম। অনেক আগে যখন এসেছিলাম, এমন ছিল না। ওয়েষ্ট্রানাইজড এখন বিভিন্ন ভাবে। উপনিবেশের কারণ ছাড়াও কয়েক ডিকেট ধরে, কেবল টেকনোলজিক্যাল কারণ নয়, ইনফরমেশন ওয়ার্ল্ড এর কারণে পৃথিবীর সব দেশই পাশ্চাত্যের অনেক অনেক কিছুই গ্রহণ করেছে। করে যাচ্ছে। কিছু ট্র্যডিশনাল ব্যাপার ছাড়া। এটাই আধুনিকতা, মনে করছে তারা। ধর্মপ্রধান দেশগুলোও তার বাইরে থাকছে না। যদিও অনেক যায়গায় ওয়েষ্ট্রানাইজড হতে চেয়ে, বিকৃতও করছে অনেক কিছু। সঠিক ভাবে বুঝতে না পারার কারণে।

এরপরেও বিপরীত একটি ছবির সাথে পরিচিত আমরা, ‘আলকায়েদা’র উদ্ভবের পর থেকে। ‘আই এস’ ইসলামিক এক্সট্রিমিজম কে ভয়ঙ্কর সব ডায়মেনশন দিয়েছে। তার কিছু প্রভাব রয়েছে এখনও,প্রতিটি দেশে। ড্যামেজড হয়ে যাওয়া মগজের মানুষগুলোর ভেতরে। অদ্ভ‚ত ধরণের কিছু পোশাক পরে বোঝাতে চাচ্ছে, ইসলামিক বিপ্লবের ফ্যান্টাসীর বাস্তবতা। এরকমই মনে হচ্ছে আমার। তবে এটাও কমে আসছে কিছুটা, আলকায়েদা আর আইএস এর পরাজিত অবস্থার পর থেকে।

এই অঞ্চলটি ‘নাদোর’ খুব পছন্দ আমার। বেশ কিছু মরোক্কান বন্ধু থাকে এখানে। পারি দেখা করতে কারো সাথে। বিশ্রাম ছাড়া অন্য কাজ নেই, এই শেষ বিকেলে। ফোন করলে খুব দ্রæত চলে আসবে সব কাজ রেখে। নিয়ে যাবে আমাকে তাদের কাছে। ফোন করতে ইচ্ছে করছে না। করবো কী করে? শান্তি কী দিচ্ছে সে আমাকে? এতো এতো এতো অশান্তি তৈরী করছে আমার জীবনে যে, সে কেনো এলো আমার সাথে এখানে? বিষন্নতা ক্লান্তি অস্থিরতা। ¯œান এবং ডিনার শেষে,আর কোন উপায় থাকে না, বিছানার আহবান উপেক্ষা করার।

মনের ক্লান্তি হারিয়ে যায় ঘুমের আদরে। জেগে যাই কোন অজানা কারণে আবার। রাত তখন কতো, জানতে ইচ্ছে করে না। ভ‚মিকম্পের অভিজ্ঞতা হয়েছে যতোটুকু, তার জন্যে দায়ী টেলিভিশনের স্ক্রিণ। কম ভয়ানক ছিলো না সেটা। কী হচ্ছে আমার? এ কেমন ভ‚মিকম্প? মাথা থেকে পা। পা থেকে মাথা। ভেঙ্গে যাচ্ছি। ভেঙ্গে যাচ্ছি। হয়ে যাচ্ছি ধংসস্তুপ। বুঝতে পারি ঢেউ তুলছে ’অক্সিটোসিন।’ কাঁপাচ্ছে আমাকে। কাঁপাচ্ছে ভীষণ ভাবে। কোন কর্তৃত্ব নেই আমার এর ওপর। এ এক প্রচন্ড টর্নাডো। ঠেকাবো? সে শক্তি কোথায়?

আমি ভালোবাসি। ভালোবাসি আমি। তোমাকেই ভালোবাসি। আমার অনুভ‚তির প্রতিটি বিন্দু বলছে। বলছে, প্রবল টর্নেডোর তীব্রতায়। আর প্রচন্ড ভ‚মিকম্পের ঝাঁকুনিতে। সে কোথায়? কোথায় সে এখন? এই ভ‚মিকম্প, তাকেই চাচ্ছে। তাকেই চাচ্ছে এই টর্নাডো। আমার ভেতরের যে আমি, তাকে নয়।

মরোক্কোর কাজ সেরে ফিরে আসি। ভ‚মিকম্প? না শরীরকম্প? অনন্ত অসীম হয়ে কাঁপায় আমাকে। ভালো লাগে না কিছুই। খুউব প্রিয় এই জীবন, আর আমাকে জড়িয়ে থাকা, প্রিয় প্রিয় সবকিছু। যা ছিলো প্রতি মুহূর্তের ভালো লাগা আর ভালোবাসা। কিছুই আর প্রিয় নয় এখন। সব প্রিয় কী হারাচ্ছি, একটি প্রিয়’র জন্যে? এ অনুভ‚তিই প্রেম? এই অনুভ‚তিই সেই ভালোবাসা, যা উন্মাদ করে অস্থিরতায়? কাঁপায় ঘুম ঘুম ক্লান্তিতেও? আর কেউ নেই কেনো আমার পৃথিবীতে, সে ছাড়া?

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চ...

দেশবিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশবিরোধী একটি...

কাতারের আমির-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাতারের আমির শে...

গরমে পোষা প্রাণীর যত্ন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: প্রতিদিনই বাড়ছ...

ফরিদপুরে বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুর জেলার ম...

মধুখালীতে ২ ভাইকে হত্যা, গ্রেফতার ৮

জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুরের মধুখালী...

অসুস্থ হয়ে হাজতির মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কেরানী...

সালমানের বাড়িতে হামলা, দ্বিতীয় বন্দুক উদ্ধার

বিনোদন ডেস্ক: বলিউড সুপারস্টার সা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা