মতামত

ইসলামে নারীর উত্তরাধিকার

নাবিলা ইয়াসমিন : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পিতামাতা এবং আত্মীয়—স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ রয়েছে এবং পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে নারীরও অংশ রয়েছে, তা অল্পই হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সূরা নিসা, আয়াত-০৭) ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পাঁচ জায়গায় উত্তরাধিকার পাবে -মা, বাবা, ভাই, স্বামী এবং ছেলের।

প্রিয় পাঠক একটা গল্প বললে বিষয়টা আরও সহজ হবে। অনেক দিন আগে কথা। লোকমুখে একটা গল্প শুনেছিলাম, এক গ্রামে তিন বোন ছিল। তাদের বড় বোনের নাম ছিল জয়তুন। তাদের একটি মাত্র ভাই ছিল। তার নাম ছিল আমিন।

বাবার মৃত্যুর পর জয়তুন তার ভাইয়ের কাছে সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইলো। তার ভাই আমিন তাকে তার বাবা সম্পত্তি দিবে না এমনটা জানিয়ে দিল জয়তুনকে। বিষয়টি মিমংসা করতে পরবর্তীতে এলাকার এক হুজুর কাছে তারা শরণাপন্ন হলো। কিন্তু হুজুর জয়তুন ও তার দুই বোন কে ডেকে বলেন, ‘কুরআনে আছে যে তোমরা কোন সম্পত্তি পাবে না।’

এদিকে তিন বোন হতভম্ব হয়ে গেল। হুজুর কোরআনের সূরা পড়া শুরু করলেন।

‘আত তিনই ওয়াজ জাইতুন (জাইতুন রা তিন বোন)
ওয়া তুরি ছিনা (তোদের কে চিনি না)
ওয়া যাল বালাদিল আমিন (যা আছে সব আমিন এর)’

হুজুরের এমন বক্তব্যে তাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেল। শূন্য হাতে তিন বোন সেখান থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু এ গল্প থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে, আমাদের সমাজে এখনও কিছু অসাধু মানুষ আছে। যার কোরআনের আয়াতকে বিকৃতি করে নারীদের অজ্ঞতা মনে করে নারীদের প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে।

অথচ কোরআনে এমনটি নেই। কোরআনের সূরা নিসার ১১ আয়াতে বলা হয়েছে,

১) ‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। তবে যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয় তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’

২) ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তান সম্পর্কে আদেশ করেন : একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান । অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’এর অধিক, তবে তাদের জন্য ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ মা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয় তবে তার জন্য অর্ধেক।

মৃতের পিতা মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পরে, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ আল্লাহ সর্বজ্ঞ রহস্যবিদ।’

‘আর তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি যা ছেরে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমাদের হবে এক চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির যা তারা ছেড়ে যায় ওছিয়্যত্যের পরে , যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর।

স্ত্রীদের জন্য এক চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের সন্তান না থাকে আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তবে তাদের জন্য হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং এই মৃতের এক ভাগ এবং এক বোন থাকে তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর , যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে অপরের ক্ষত না করে ।এ বিধান আল্লাহর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।’
- সূরা নিসা:১২

এদিকে মুসলিম আইন বলে ‘Muslim family law Ordinance 1961) অনুযায়ী একজন নারী (কোরানিক শেয়াররে) কন্যা (কোরানিক শেয়াররে) মা (কোরানিক শেয়াররে) সৎ বোন (কোরানিক শেয়াররে) শর্তসাপেক্ষে, এছাড়াও বোন হিসেবে সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ৯০% বাংলাদেশী মুসলিম নারী এ ব্যাপারে অসচেতন এবং অজ্ঞ! সাথে রয়েছে আরো কিছু সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। যেমন- ভাইয়ের কাছে সম্পত্তি চাইলে সম্পর্কে ফাটল ধরার আশংকা, মৃ্ত্যুর হুমকি পর্যন্ত ঘটনা গড়াতে পারে।

তাই মুখ বুজে অন্যায় মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আজীবন বঙ্গ নারীপটু । আশ্চর্যের বিষয় হলো অত্যন্ত ধার্মিক পরিবার গুলোতে এসব ব্যাপারে প্রচন্ড উদাসীন। ডিজিটাল এই দেশে ২০২০ সালে অন্তত পক্ষে ৮৯ জন নারী যৌতুক বিষয়ক নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এখনও যদি সচেতন না হয়। অদূর ভবিষ্যৎতে নির্যাতনের পরিমাণ বাড়বে কমবে না। এদিকে যৌতুকের বিষয় মানুষ যতটা আগ্রহী অন্যদিকে মোহর আদায়ের ব্যপারে ততটাই উদাসীন!
মোহর বিষয়ক অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি মামলা বাংলাদেশে হয়েছিল।

আবদুল রহমান বনাম শাহানারা বেগম (বিচারক ছিলেন ফজলে হোসাইন ও প্রমুখ) রায় প্রদানের তারিখ ৮ই আগস্ট। ১৯৯০ (মনসুর ২০০৫, পৃঃ ২৫৯) Case no.2

আতিকুল হক চৌধুরী বনাম সাহানা রহিম (বিচারক ছিলেন মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ও প্রমুখ) রায় প্রদানের তারিখ ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ ( মনসুর ২০০৫, পৃঃ ২৫৯)

এই কেস গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,বাংলাদেশী নারীদের সামাজিক অবস্থান কতটা করুন ও শোচনীয় এই সকল সমস্যা দূরী করনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

১) ইসলাম ধর্মে নারীর যে উত্তরাধিকার দেওয়া আছে তা সম্পর্কে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি NGO এর মাধ্যমে নারীদের মাঝে সুস্পষ্ট জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে।

২) অসহায়ে নারীরাদের জন্য মামলা করার ঝামেলা এবং খরচের বিষয়ে চিন্তা করে যেকোন আইনত সহায়তা নিতে দ্বিধাবোধ করেন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে তারা যে সম্পূর্ণ আইনত সহযোগিতা বিনামূল্যে পান সে ব্যাপারে বেশী প্রচার করা জরুরী।

৩) জনসচেতনতা বৃদ্ধিকরণ।

৪) বিয়ের সময়েই দেনমোহর আদায়।

এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পরও সমাজের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্তব্য হচ্ছে এই সকল ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় তাহলেই আশা করা যায় যে সমাজের এইসকল অসঙ্গতি একটু হলেও লাঘব হবে।

লেখা, শির্ক্ষাথী ,আইন বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

জাহাজ উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য ক...

চট্টগ্রামে কারখানায় ভয়াবহ অগুন

জেলা প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে একটি জুতার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিক...

ভাড়া নিয়ে হয়রানি করলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের...

ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতে ইসরাইলকে নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ এড়াত...

প্রেমিককে ডেকে ফেঁসে যান অনন্যা

বিনোদন ডেস্ক: ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডে। বাবা-ম...

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলতি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা