মতামত

আওয়ামী বিএনপি, জাসদী জামাত: সর্বদলীয় ওয়াজ 

মোস্তফা কামাল:

সরকার একদম নির্ভারে। মাজাভাঙা বিরোধীদল নিয়া নো টেনশনে। আশপাশে কোনো ঝক্কি--ঝামেলাই দেখিতেছে না। এই কিছিমের বিরোধীপক্ষ এই জনমে সিধা হইয়া দাঁড়ানোর হিম্মত পাইবে না ভাবিয়া যারপরনাই স্বস্তি সরকারের। অন্যদিকে, গদিনশীন সরকারের একটা পশমও হিলাইতে পারার খোয়াব আপাতত বিএনপিও দেখে না। তবে, আল্লাহর মাইরের আশা রাখে। তাই আল্লাহর হাওলা হইয়া তাহাদের গুডবয় পলিটিক্স। জাহেরি-বাতেনি, কুদরতি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে একদিন সরকার ছারখার হইয়া যাইবে সেই ভরসায় ধৈর্য্য ধরা। আল্লাহ ধৈয্যরশীলদের পছন্দ করেন নেয়ামত দেন।

ইহার বাহিরে সবুরে মেওয়া খাওয়ার আশাভঙ্গ দিয়া বিএনপির কিছু নেতাকর্মী ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া টুকটাকে চুপচাপে ভাগেভোগে খাওয়ার তরিকা নিয়াছেন। কেবল ব্যবসাপাতি নহে, আত্মীয়তার সম্বন্ধও পাতিতেছেন। ইহাতে বরকত মন্দ নহে। ইহার মধ্যেই বোনাস হইয়া আসিয়াছে ঢাকা সিটি নির্বাচন। ইহাতে শরীক হওয়ার উছিলায় তাহাদের ছিদ্দত অনেকটা কাটিয়াছে। নতুন করিয়া কোনো হামলা-মামলায় পড়িতে হয়নাই। উপরন্তু এখন বাসাবাড়িতে থাকিতে পারিতেছেন। ঘোরাফেরা করিতে পারিতেছেন। মাত্র কয়দিন আগেও তাহা ভাবা যায় নাই। পালানোর জায়গা পর্যন্ত জুটিতেছিল না। শ্বশুরবাড়িতেও লুকাইতে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি শুরু হইয়াছিল। বন্ধুর বাসায় লুকাইতে গিয়াও কেলেঙ্কারি। বন্ধুর বিবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়াইয়া জেল খাটার শিকার হইয়াছেন এক নেতা। তা-ও আবার পরিচয়ে ব্যারিস্টার।

মান-ইজ্জত ছারখারের সেই অবস্থার তুলনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন নিরাপদ। নিশ্চিন্তে কোর্টে হাজিরা, পার্টি অফিসে চক্কর দেওয়া, চেনাজানাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ জুটিতেছে। ঢাকা সিটি নির্বাচন বিএনপিকে আরেকটা বেনিফিট দিয়াছে। রাজনীতি ও গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ ভোট তথা নির্বাচনব্যবস্থা কলঙ্কিত হওয়ার বিকৃত স্বস্তি আসিয়াছে। আওয়ামী লীগের জমানায় ভোট দেয়া, না দেয়ায় কিছু যায়- আসে না- এ তত্ত্ব টেকসই করার একটা মওকা মিলিয়াছে। ইহা সরকারকে করুণ পরিণতিতে নিয়া যাইবে বলিয়া অপেক্ষা করিতেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো এতো সরলীকরণে নেই নির্বাচনী রাজনীতিতে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামি। তাহারা আগুয়ান বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রায়। দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হইয়াছে জাসদ হইতে জামায়াতে আসা দুই মুহতারামকে। আমীর করা হইয়াছে এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ করা ডা. শফিকুল ইসলামকে। আর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের ময়দান হইতে গাজী হইয়া ফেরা এই দুই জনকে নিয়া নিশব্দে আগাইতেছে জামায়াত। ইহাতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতৃত্ব পর্যায়ের কাউকে আর লটকাইয়া দেওয়ার ঝুঁকিমুক্ত হইয়াছে। দেশে রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা একাকার হইয়া যাওয়া জামায়াতকে সামনের দিনগুলোর জন্য আলো দেখাইতেছে। প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসুচির বদলে তাহারা ওয়াজ-নসিহত, জিকির-আসকারে মত্ত থাকার কৌশল নিয়াছে।

দেশের আনাচে-কানাচে ওয়াজের মাঠ এখন বিশাল-বিস্তৃত। কেবল গ্রামগঞ্জ নয়, শহরাঞ্চলেও এবার ওয়াজ তুঙ্গে। ওয়াজ এখন শুধু রাতে নহে, দিনেও হইতেছে। সকাল-দুপুর-বিকাল বিভিন্ন বেলায়ই হয়। এইসব ওয়াজে শরীকানা আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ প্রায় সব দলেরই। বিভিন্ন মাহফিলে সভাপতির কুরশিতে বসিতেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা, এমপিরাও। এইখানে তাহাদের হিসাব পরিস্কার। লোকজন জড় করিতে বাড়তি টাকা গুনিতে হইতেছে না। মাহফিলের উছিলায় রেডিমেট জমায়েত পাওয়া যাইতেছে। চান্সে একটা বক্তৃতা দেওয়া যাইতেছে। হাল বুঝিয়া ওয়াজিনরাও বেশ কৌশলী। সবর্দলীয় বা নিরপেক্ষ ভাব ধরেন। আওয়ামী লীগ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আগের মতো বিষোদগার করেন না। স্থানীয় প্রশাসনও আদর-সমাদর করিতেছে হুজুরগণকে। তাহাদের বেশিরভাগই জামায়াতের প্রোডাক্ট। কেহ কেহ বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোটের অন্যান্য দলের। সামান্য কয়েকজন হেফাজত হয়ে আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত। ওয়াজিন হজরতদের কেহ কেহ বিশাল ধনবান-বলবান। হাতে তাহাদের প্রচুর শিডিউল। বিশাল হাদিয়া, তোফা, উপহারের বিনিময়ে তাহাদিগকে মেহমান করিতে হয়। কেহ কেহ হেলিকপ্টারে যাতায়াত ডিমান্ড করেন।

সাম্প্রদায়িকতা, নারীবিদ্বেষ ও জঙ্গিবাদ ছড়ানো, দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বয়ান দেওয়ার অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বছরখানেক আগে ১৫ হুজুরের একটা বিশেষ তালিকা করিয়াছিল। রহস্যজনকভাবে তাহাদের রাহু কাটিয়া গিয়াছে। লম্বা লম্বা নাম তাহাদের। নামের আগে আল্লামা, শায়খুল হাদিস, মুফাসসিরে কোরআন, মুফতি, মুহাদ্দিসসহ বহু বিশেষণ। আর পেছনে মাদানি, আজহারি, জাফরি, আমিনী, আফসারি, আব্বাসি, জেহাদি, নূরানি, যশোরী, চাঁদপুরী, ভৈরবী, শরীয়তপুরী, তাহেরী, জাহেরী, আনসারী কতো কী? ওহাবি, সুন্নি, দেওবন্দি, মাজারি, বাজারি, খানকাপন্থি, তাবলিগি, কেয়ামি-লাকেয়ামি ইত্যাদিতে বিভক্ত হইলেও কাহারো বাজার খারাপ নয়। তাহাদের ওয়াজে অনেকে বিনোদিত। টেলিসামাদ, দিলদার, হাসমত, আনিস, মতি, সাইফুদ্দিনরা গত হইলেও নানা কিচ্ছা, ভাঁড়ামি, অঙ্গভঙ্গি, সুড়সুড়ি, গীত-গানে আচ্ছা বিনোদন সাপ্লাই নিশ্চিৎ করিয়া চলিয়াছেন এই মুহতারামরা। আপত্তি করার কোনো চান্স নাই। গানের টান, জিকিরের স্টাইলে বয়ান শুনাইয়া মানুষের মুখ দিয়া মাশাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ আওয়াজ বাহির করিয়া ছাড়িতেছেন।

ওয়াজে কিছু বলার পরই বয়ানশিল্পিরা জানিতে চান ‘ঠিক কি-না’? প্যান্ডেল থেকে ‘ঠিক-ঠিক’ আওয়াজ আসে। তা আস্তে হইলে মাইন্ড করেন হুজুরগণ। হুকুম দেন জোরে, চিৎকার-চিক্কুর দিতে। সেইটা করিতে গিয়া স্ট্যাণ্ডআপ কমেডিয়ান ধাঁচে কেউ কেউ মঞ্চে লাফান, নাচেন। চোখে পানি না আসিলেও কান্নার ভান করেন। ঘনঘন চোখ মোছেন। ফেসবুক, ইউটিউবেও তাদের বাজার রমরমা। ওয়াজের ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কন্ট্রাক্ট আয়ের নতুন খাত। পাশাপাশি মাইক-ডেকোরেটর ব্যবসা জমেছে। ওয়াজ-মাহফিলেকে হামদ-নাত ও ধর্মীয় উৎসাহব্যঞ্জক গান পরিবেশনকারী শিল্পীগোষ্ঠী গড়িয়া উঠিয়াছে।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়)

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে অচল অবস্থা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সি...

লক্ষ্মীপুরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম চালু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে...

অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

রংপুর ব্যুরো: রংপুর জেলাসহ বিভাগে...

ভোলায় বঙ্গবন্ধু সেজেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা

ভোলা প্রতিনিধি: শ্রদ্ধা ও ভালোবাস...

মোস্তফা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

তানভীর-জেসমিনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক : হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা মামল...

কয়লা আনতে গিয়ে নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে চোরাইপথে ভ...

পাথরচাপায় প্রাণ গেল ২ শ্রমিকের

জেলা প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় সীমান্তে অবৈধভ...

শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম, গ্রেফতার ৪ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারে দুই স্কু...

পিকআপ-লেগুনা সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৬

জেলা প্রতিনিধি: সিলেট জেলার জৈন্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা